সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের (সওজ) ‘সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আটটি খাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রচার ও বিজ্ঞাপনে ২০ লাখ, স্ট্যাম্প ও সিলে ১৫ লাখ, সম্মানীতে ২০ লাখ, মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ে ১০ লাখ, কনসালটেন্সিতে (পরামর্শক) ৫৪ কোটি ৮৩ লাখ, মূলসহ গাছ অপসারণে চার কোটি ৬৫ লাখ, ইউটিলিটি শিফটিংয়ে সাত কোটি ৪৫ লাখ এবং অন্যান্য ব্যয়ে ২০ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
Advertisement
শুধু এ প্রকল্প নয়, অধিকাংশ প্রকল্পেই এভাবে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যেখানে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও কোনো পণ্যে বা সেবায় কত খরচ করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট থাকে না। ওই বরাদ্দ থেকে সংশ্লিষ্টরা ইচ্ছামতো অর্থ খরচ করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকল্পে কী পরিমাণ পণ্য লাগবে, তা কিনতে কত টাকা খরচ হবে, সেটার বাজারদর কত কিংবা কতজন শ্রমিক লাগবে, তাদের কত টাকা মজুরি দেয়া হবে অথবা কতজনকে কত টাকা সম্মানী দেয়া হবে, কিসের ভিত্তিতে দেয়া হবে –এমন অসংখ্য খাতে খরচের হিসাব সুনির্দিষ্ট না করে থোক বরাদ্দ দিয়ে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করা হয়।
অনিয়মের এ সুযোগ তৈরির দায় যাচাইকারী পরিকল্পনা কমিশন ও প্রস্তাবকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদফতরও এড়াতে পারে না বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
মোংলা বন্দরের জোরদারকরণ প্রকল্প (প্রতীকী ছবি)
প্রতিনিয়তই সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর আসছে। দুর্নীতি-অনিয়ম কিছুটা হলেও কমাতে এবং ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনতে গত ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘প্রকল্পে থোকের বিষয়টি হিসাবে আসছে, এটা আমরা ভাঙব। থোক ফর আপ্যায়ন, থোক ফর ভ্রমণ, থোক ফর এই পারচেজ (কেনা), ওই পারচেজ– এটা মানা হবে না।’
পরিকল্পনামন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয়টি একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে মোট ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪টি প্রকল্পেই থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ৩৪ প্রকল্পে মোট ৩৬৯টি খাতে থোক অর্থাৎ ‘অস্পষ্ট’ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রকল্পে থোক বরাদ্দ ‘মানা হবে না’ ঘোষণা দেয়ার পরও তা চলমান– বিষয়টি গত ১ জানুয়ারি জাগো নিউজের পক্ষ থেকে পরিকল্পনামন্ত্রীকে জানানো হয়। বিষয়টি অস্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘থোক বরাদ্দ দেব না, এটা কি আমি বলেছিলাম? দেব না- এ ধরনের কথা বলার তো কথা নয়। থোক বরাদ্দ নিরুৎসাহিত করা হবে।’
Advertisement
পরিকল্পনামন্ত্রীর দাবি, ‘থোক বরাদ্দ আগের চেয়ে কমে এসেছে। আরও সময় লাগবে কমতে। দীর্ঘদিনের একটা সংস্কৃতি ছিল এখানে। সেটা কমিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এক লাফে পারা যাচ্ছে না। আমার ধারণা, আগের তুলনায় কমেছে। সামনের দিন আরও কমবে এটা।’
যদিও জাগো নিউজের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ‘থোক বরাদ্দ মানা হবে না’ বক্তব্যের পর ৩৪ প্রকল্পেই ৩৬৯টি খাতে এমন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এম এ মান্নান বলেন, ‘এ বিষয়ে অফিস আদেশ জারি করিনি আমি। এটা অফিস আদেশ জারির বিষয় নয়, আলোচনার বিষয়। আমার যারা সদস্য আছেন, সচিব যারা, তারাই তো প্রকল্পগুলোকে চূড়ান্ত অনুমোদনের শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসেন। তারপর তারা সেগুলো আমার কাছে তুলে ধরেন। আমি সেটা প্রধানমন্ত্রী বরাবর তুলে ধরি একনেক সভায়। চূড়ান্ত রূপ কী হবে, সেটা তারাই (সচিবরা) দেন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বা বোঝানো হচ্ছে, আপনারা যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন বা ডেপুটি চিফরা যেন এসব ব্যাপার দেখেন। তারা থোক-ঠোক, মূল্যের ব্যাপারগুলো দেখেন।‘
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত
তিনি বলেন, ‘এটার (থোক বরাদ্দ বন্ধ) জন্য তো কোনো সার্কুলারের প্রয়োজন নেই। আমাদের বিভিন্ন বিধি-বিধানে এগুলো আছে। ভালোভাবে ফলো করলেই কিন্তু হয়। সমস্যা হলো বিধি-বিধানগুলো ফলো করে না অনেকে। অনেকে জানে না, অনেকে দেখেও না। এগুলো বারবার ইম্প্রুভ (উন্নতি) করতে হয়। অনেকে অনভিজ্ঞ। নতুন এসেছে, এ লাইনে কাজ করেনি। তার দোষ নয় এটা, সে জানে না এটা। তাকে শিখতে হবে।’
‘আবার অনেকে আছে, উদ্দেশ্যটা ভালো নয়। এটা হতে পারে। মানুষ তো আমরা। সবকিছু মিলিয়েই তো কাজটা হচ্ছে’- যোগ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সরকার একটা জীবন্ত প্রতিষ্ঠান। নিত্যনৈমিত্তিক নানাধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন। তবে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে সরকার চালানো যাবে না। অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে।’
থোক বরাদ্দের চিত্র
গত ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান সরকারের ২৪তম একনেক সভায় সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। তার মধ্যে ছয় প্রকল্পে ৪৫ খাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ‘সিলেট, লালমনিরহাট ও বরিশাল ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি স্থাপন’ প্রকল্পের দুটি খাতে; ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পের ২৬ খাতে; ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা জোরদারকরণ’ প্রকল্পের তিন খাতে; ‘মোংলা বন্দরের জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আট খাতে; ‘মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পের দুই খাতে; ‘সীমান্ত সড়ক নির্মাণ : ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা অংশ (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পের চার খাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
২৪ ডিসেম্বর ২৩তম একনেক সভায় নয় প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে চার প্রকল্পের ১০১টি খাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ‘চামড়া শিল্পনগরী, ঢাকা (চতুর্থ সংশোধিত)’ প্রকল্পের ৪৫ খাতে; ‘দেশ-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান’ প্রকল্পের ১৫ খাতে; ‘মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্পের আট খাতে; ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পের ৩৩ খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
১৭ ডিসেম্বর ২২তম একনেক সভায় নয় প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সাত প্রকল্পের ৪৮ খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’ প্রকল্পের সাত খাতে; ‘খাদ্যশস্যের পুষ্টিমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রিমিক্স কার্নেল মেশিন ও ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং অবকাঠামো নির্মাণ (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পের এক খাতে; ‘আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি (এএফআইপি) এর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের নয় খাতে; ‘দিঘলিয়া (রেলগেট)-আড়ুয়া-গাজীরহাট-তেরখাদা সড়কের (জেড-৭০৪০) প্রথম কিলোমিটারে ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের নয় খাতে; ‘সিরাজগঞ্জ-কাজিপুর-ধুনট-শেরপুর (জেড-৫৪০১) এবং সিরাজগঞ্জ (বাগবাটি)-ধনুট (সোনামুখী) (জেড-৫৪০৫) মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের ১২ খাতে; ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন, সংসদ সদস্য ভবন ও এমপি হোস্টেলের আনুষঙ্গিক স্থাপনার নির্মাণ ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের আট খাতে এবং ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধন)’ প্রকল্পের দুই খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গত ১০ ডিসেম্বর ২১তম একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয় সাত প্রকল্প। এর মধ্যে ছয় প্রকল্পের ৬৯ খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ‘আলোকিত পল্লী সড়কবাতি’ প্রকল্পের ১৬ খাতে; ‘নাগেশ্বরী-কাশিপুর-ফুলবাড়ী-কুলাঘাট-লালমনিরহাট জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের আট খাতে; ‘ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুরিয়া জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭০৪) কুষ্টিয়া শহরাংশ চার লেনে উন্নীতকরণসহ অবশিষ্টাংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের ১০ খাতে; ‘ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের হাসাড়া পর্যন্ত জেলা মহাসড়ক (জেড-৮২০৩) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের নয় খাতে; ‘কক্সবাজার জেলার রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক (এন-১০৯) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আট খাতে এবং ‘পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধন)’ প্রকল্পের ১৮ খাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নির্মাণ প্রকল্প (প্রতীকী ছবি)
গত ২৬ নভেম্বর ২০তম একনেক সভায় ছয় প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এ সভায় সবগুলো প্রকল্পের মোট ৫৭ খাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়। ‘ঢাকা এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড সঞ্চালন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের ১৮ খাতে; ‘নাটোর রোড (রুয়েট) হতে রাজশাহী বাইপাস পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধন)’ প্রকল্পের আট খাতে; ‘ফেনী (মাস্টারপাড়া)-আলোকদিয়া-ভালুকিয়া-ছাগলনাইয়া (শান্তিরহাট) জেলা মহাসড়কটি যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের সাত খাতে; ‘মাগুরা-নড়াইল (আর-৭২০) আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঁক সরলীকরণসহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আট খাতে; ‘বগুড়া-সারিয়াকান্দি জেলা মহাসড়ক (জেড-৫০৩২) উন্নয়ন এবং বাঙালি নদীর ওপর আড়িয়ারঘাট সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের ১০ খাতে এবং ‘পালবাড়ী-দড়াটানা-মনিহার-মুড়ালী জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭০৭) মনিহার হতে মুড়ালী পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের ছয় খাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর ১৯তম একনেক সভায় ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচ প্রকল্পের ৪৯ খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। সেগুলোর মধ্যে- ‘সিলেট জেলার সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগণা বাজার এলাকার সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্পের ১৪টি খাতে; ‘আগারগাঁওস্থ শেরেবাংলা নগরে পর্যটন ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পের ১৩ খাতে; ‘কক্সবাজার জেলার একতাবাজার হতে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি পর্যন্ত সড়ক (জেড-১১২৫) উন্নয়ন’ প্রকল্পের নয় খাতে; ‘ফেনী-সোনাগাজী-মুহুরী প্রকল্প সড়কের ৩০তম কিলোমিটারে ৩৯১ মিটার দীর্ঘ মুহুরী সেতু এবং বক্তারমুন্সী-কাজিরহাট-দাগনভূঁঞা সড়কের ১৩তম কিলোমিটারে ৫০ দশমিক ১২ মিটার দীর্ঘ ফাজিলাঘাট সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আট খাতে এবং ‘যশোর (রাজারহাট)-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর-৭৫৫) উন্নয়ন’ প্রকল্পের পাঁচ খাতে থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞের অভিমত
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মন্ত্রী যেটা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। হিসাব সুনির্দিষ্টভাবে করা সম্ভব, কিন্তু করা হয় না। এটা গাফিলতি, মানে নিজের কাজটা না করা। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের অস্পষ্টতা ইচ্ছা করেই হয়তো রাখে। যাতে এখান থেকে টাকা-পয়সা এদিক-সেদিক করা যায়, মানে দুর্নীতি করা যায় আর কি! দুর্নীতির জায়গাটা তৈরি হয়ে যায় এখান থেকে। এটা যতটা না দক্ষতার অভাব, তার চেয়ে দুর্নীতিবাজরাই করে এগুলো। সেজন্যই এখানে টাইট (সুনির্দিষ্ট করা) দেয়া প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটা দুঃখের বিষয় যে, মন্ত্রী বলা সত্ত্বেও শোধরানো হলো না। এটা সঠিক, থোক বন্ধ করতে হবে।’
থোক বরাদ্দে প্রস্তাবকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদফতরের পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সংশ্লিষ্টদেরও দোষ দেখছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক এ লিড ইকোনমিস্ট।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘পিইসির তো এগুলো খতিয়ে দেখার কথা। মন্ত্রণালয় তো টাকা বাড়ানোর জন্য দিলেও চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের (যাচাই ও ভারসাম্য) দায়িত্ব তো পরিকল্পনা কমিশনের। সেখানেও এ থোক অনুমোদন পাচ্ছে। এর দায় তো পরিকল্পনা কমিশনও এড়াতে পারে না।’
প্রকল্প অনুমোদনের আগে তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়, এরপর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় খরচ সুনির্দিষ্ট করা হয় না কেন- এ প্রশ্নও তোলেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প নকশা করার জন্যই তো স্টাডিগুলো করা হয়।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এর বাইরেও অনেক প্রকল্পে অপ্রত্যাশিত ব্যয় রাখা হয়। অপ্রত্যাশিত এ ব্যয় রাখা হলে তো আর থোক বরাদ্দের প্রয়োজন থাকে না।’
পিডি/এইচএ/এমএআর/এমএস