ধর্ম

বিশ্বনবির আনুগত্যে মিলবে যেসব নেয়ামত

দ্বীনের পথে অটল ও অবিচল থাকার অন্যতম উপায় হচ্ছে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করা। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা এটিকে মুমিন মুসলমানের জন্য মানদণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কারণ আল্লাহর ভালোবাসা পেলেই মানুষের দুনিয়া ও পরকালের সব কল্যাণ সুনিশ্চিত।

Advertisement

দুনিয়ার শান্তি ও শাস্তি দুটোই ক্ষণিকের। কিন্তু পরকালের সময়কাল শেষ হবে না। পরকালে বিচার দিবসের চিত্রেই আগের আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ তার সব আমলনামা দেখতে পাবে, যা থেকে পলায়ন করতে চাইবে। সে কথাও আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করতে কুরআনে তুলে ধরেছেন।

মানুষ সাধারণত মুখে মুখে নিজেকে আল্লাহওয়ালা তথা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে জাহির করতে চায়। পরিচয় দিতে চায়। এ কথা বুঝাতে চায়, যে দ্বীন ও ঈমানের উপর তিনি অটল ও অবিচল। তাদের উদ্দেশ্যে এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা ছোট্ট একটি মানদণ্ড তুলে ধরেছেন। যে মানদণ্ডে প্রকাশ পাবে- সত্যিকারার্থে কে আল্লাহওয়ালা হওয়ার যোগ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন-قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌঅনুবাদ : ‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

আয়াত নাজিলের কারণসুরা আল-ইমরানের ৩১ নং আয়াতটি শুধু মুমিন মুসলমানের জন্যই নয় বরং সব ধর্ম বর্ণের মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের সব কর্মপন্থার এমন এক মানদণ্ড সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। যে মানদণ্ড পালনেই রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের মুক্তি। সে মানদণ্ড হলো শুধু প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করা। আর তাতেই আল্লাহর ভালোবাসা তথা দুনিয়া ও পরকালের মহাসাফল্য সুনিশ্চিত।

Advertisement

আয়াতটি নাজিল প্রসঙ্গে জানা যায়-- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তার কাছে কিছু লোক এসে বলল, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আল্লাহর নামে শপথ! করে বলছি যে, আমরা আমাদের প্রভুকে (আল্লাহকে) ভালোবাসি। তখন এ আয়াত নাজিল।এ মর্মে আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে যে, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার দাবি কর, তবে আল্লাহর প্রিয় রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরিপূর্ণ রূপে আনুগত্য করার কষ্টি পাথর দিয়ে তোমাদের দাবি ও প্রমাণ উপস্থাপন কর। কেননা যে যত বেশি তাঁর অনুসরণ করবে সে তত বেশি আল্লাহ পাকের প্রতি তার প্রেম ভালোবাসার প্রমাণ দেবে।

আয়াতের আলোকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর ভালোবাসা ও ইসলামের পরিপূর্ণতার জলন্ত প্রমাণ।

এ আয়াতের ব্যাখ্যা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের একটি তাফসির এসেছে-‘মক্কার পৌত্তলিক মূর্তি পুজারীরা কাবা শরিফে ভেতরে মূর্তি স্থাপন করেছিল। আর বণ্য মুরগীর ডিম তার ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেছিল। আর সেগুলোর কানে বালি পরিয়ে সেগুলোর সামনে সেজদা করছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে গেলেন, কিছু অপেক্ষা করলেন এবং বললেন-

‘হে কুরাইশ! তোমরা তোমাদের পিতামহ ইবরাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর তরিকা বা পদ্ধতির বিরোধিতা করছো।

Advertisement

তখন কুরাইশরা বলেছিল, ‘আমরা তো আল্লাহর মহব্বতে মূর্তি পূজা করি। যাতে এ পূজার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য বা ভালোবাসা লাভ করতে পারি। তখন এ আয়াত নাজিল হয়।

এ আয়াতের শানে নুজুলে তাফসিরে আরও এসেছে->> নাযরানের এক খ্রিস্টান প্রতিনিধি দল যখণ বলছিল যে, আমরা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার কারণেই হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আনুগত্য প্রকাশ করি। তখন এ আয়াত নাজিল হয়। তাই আয়াতে নির্দেশ আসে এভাবে যে- আল্লাহর প্রতি যদি তোমাদের অন্তরে সত্যিকারের ভালোবাসা থাকে তবে তোমরা আল্লাহর প্রিয় নবি, সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুলের পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণ কর। এর দ্বারাই আল্লাহ তাআলার প্রতি তোমাদের ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যাবে আর আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন।

মূলত যারা ইসলাম নিয়ে তালবাহানা করতো, সেসব ইয়াহুদি ও নাসাদের উদ্দেশ্যেই আয়াতটি নাজিল হয়। যারা মুখে মুখে নিজেদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভালোবাসার কথা বলতেন। তাইতো আল্লাহ তাআলা আয়াতটি সেসব লোকদের জন্য নাজিল করেছেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ‘আল্লাহর ভালোবাসা ও দুনিয়া এবং পরকালের সাফল্য লাভে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জীবনের সবক্ষেত্রে আনুগত্য করা।

এ আয়াতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আনুগত্য করলে মুমিন মুসলমান বিশেষ দুটি নেয়ামত লাভ করবে। সেটিও ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। আর তাহলো-

>>আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে ভালোবাসবেন। আল্লাহর ভালোবাসা লাভে ধন্য হবে মুমিন।>> আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তার কোনো গোনাহ থাকবে না।

তাই যদি কোনো মানুষ আল্লাহর ভালোবাসা পায় আর তার জীবনের গোনাহগুলো ক্ষমা পায় তবে এর চেয়ে বড় সাফল্য আর কি হতে পারে?

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের সর্বাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের ঘোষিত নেয়ামত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ