দেশে বর্তমানে একটি নলকূপ বা নিরাপদ পানির উৎস ৮৭ জন ব্যবহার করে। এতে করে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত হয় না। প্রতি ৫০ জন একটি নলকূপ ব্যবহার করলে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা তৈরি করা সম্ভব হবে। এই লক্ষ্য পূরণে সরকার সারাদেশে নলকূপ বা নিরাপদ পানির উৎস তৈরির প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার।
Advertisement
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
‘সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ নামের প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বাস্তবায়ন করছে। এতে খরচ হবে ৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এই পুরো টাকার জোগান দেবে সরকার। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ৯০ হাজার ৬৩৬টি অগভীর নলকূপ, ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৭৭টি গভীর নলকূপ, ২ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি সাবমার্সিবল পাম্প ও জলাধারসহ অগভীর নলকূপ, ১ লাখ ৭০ হাজার ২২২টি সাবমার্সিবল পাম্প ও জলাধারসহ গভীর নলকূপ, ৩ হাজার ৩৭৯টি রিংওয়েল, ৩ হাজার ২১০টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ইউনিট, ৪৯১টি রুরাল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৩২০টি সোলার পিএসএফ, ২৯ হাজার ৫৭০টি আর্সেনিক আয়রণ রিমোভাল প্ল্যান্ট (ভ্যাসেল টাইপ), ৮ হাজার ৮৩৮টি কমিউনিটিভিত্তিক পানি সরবরাহ ইউনিট ও ১২টি উপজেলার অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে।
Advertisement
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বলছে, জাতীয় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নীতিমালা ১৯৯৮-এর লক্ষ্য হলো, গ্রামাঞ্চলে নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি নলকূপের জন্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০৫ থেকে ৫০ জনে হ্রাস করা। সুতরাং নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিটি নলকূপের জন্য বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৭ থেকে ৫০ জনে হ্রাস করা প্রয়োজন। কিন্তু বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে নিরাপদ পানি সরবরাহ কভারেজ বৃদ্ধিকরণ অত্যন্ত কঠিন। কারণ বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্যতা (ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ উভয়ই) দিন দিন কমে আসছে। আর্সেনিক ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ভূ-গর্ভস্থ পানিকে দূষিত করছে।
এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে অগভীর একুইফার (ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর) এলাকায় লবণাক্ততা, দুর্গম অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়া, কিছু কিছু এলাকায় কোনো ধরনের পানির উৎস স্থাপন সম্ভব না হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য সমস্যা পানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আদর্শ লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত করছে। সেই সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পানির বর্ধিত চাহিদার বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতেই বিপুল পরিমাণ পানি সরবরাহের প্রয়োজন। আর গ্রামীণ জনগণের শহরে অভিবাসন ও দ্রুত নগরায়ণে প্রয়োজনীয়তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে নীতিমালার নির্ধারিত মানদণ্ড অর্জন করতে বৃহৎ পরিসরে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। পিএন্ডসি বিভাগ, ডিপিএইচই-এর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে চালু নলকূপের সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬০টি। এই অবস্থায় প্রতি ৫০ জনের জন্য একটি পানির উৎস ব্যবস্থার জন্য এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
পিডি/এমএসএইচ/এমকেএইচ
Advertisement