মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার পরিবারের সদস্যদের ওপরও হামলার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় বাড়ির দারোয়ান হাসানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
Advertisement
রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে উত্তরার বাড়িতে ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সারওয়ার আলী। তিনি ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ও চিকিৎসক। তার ধারণা, জঙ্গিগোষ্ঠী এই কাজ করেছে।
হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন সারওয়ার আলী। গতকাল রাতে তিনি এ মামলা করেন। মামলা নম্বর ১০।
সারওয়ার আলী বলছেন, তার স্ত্রী মাখদুমা নার্গিস, মেয়ে সায়মা আলী ও জামাতা হুমায়ুন কবিরকেও হত্যার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা দুই প্রতিবেশীকেও ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। মাখদুমা নার্গিস কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক প্রকল্প পরিচালক।
Advertisement
পুলিশ বলছে, পুরো ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় বাড়ির দারোয়ান হাসানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সারওয়ার আলীর পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে অজ্ঞাতপরিচয় দুই দুর্বৃত্ত উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢোকে। তারা ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় গিয়ে তার মেয়ে সায়মা আলীর বাসার দরজায় ধাক্কা দেয়। দরজা খুলে দেয়া হলে দুর্বৃত্তরা ভেতরে গিয়ে সারওয়ার আলীর মেয়ে ও জামাতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে বাড়ির চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের চিৎকারে ওই ভবনের এক বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
পুলিশ ওই বাসা থেকে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোন, একটি ব্যাগে থাকা সাতটি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, সিনথেটিক দড়ি ও কেমিক্যাল স্প্রে উদ্ধার করেছে।
সারওয়ার আলী বলেন, দুর্বৃত্তদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর হবে। তারা প্রথমে তার মেয়ের বাসায় ঢুকেছিল। দুর্বৃত্তরা তার মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ঠিক ওই সময় তার জামাতা এগিয়ে এলে তাকেও জিম্মি করে। পরে দুর্বৃত্তরা ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে।
Advertisement
সারওয়ার আলীর সন্দেহ, ভবনের দারোয়ান হাসানের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের যোগসাজশ রয়েছে। সে আগে থেকেই বাড়ির ফটক খোলা রেখেছিল।
সারওয়ার আলীর স্ত্রী মাখদুমা নার্গিস বলেন, দরজা খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুরি হাতে একজন লোক ভেতরে ঢুকে সারওয়ার আলীকে মেঝেতে ফেলে দিয়ে তাঁর বুকের ওপর চড়ে বসে। এরপর তিনি এগিয়ে গেলে তাকেও ফেলে দেয়া হয়। এ সময় তিনি পা দিয়ে পাশের টেবিলে জোরে লাথি দিচ্ছিলেন যাতে শব্দ হয়। তিনি প্রাণপণ চিৎকারও করছিলেন। সেই চিৎকার শুনে দোতলা থেকে শাহাবুদ্দিন ও তার ছেলে এগিয়ে আসেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ জানায়, বাড়ির দারোয়ান হাসানের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ফোনটি ছিল মাখদুমা নার্গিসের গাড়িচালক নাজমুলের, সেটি দারোয়ান হাসান ব্যবহার করছিলেন। হামলার দিন দারোয়ানের ওই ফোনে অন্তত ৩০টি কল আসে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় সারওয়ার আলী বাদী হয়ে বাড়ির দারোয়ান হাসান, তাদের সাবেক গাড়িচালক নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। যেহেতু ঘটনাস্থলে উদ্ধার ফোনটি হাসানের, তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন নাজমুলকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
জেইউ/এসআর/জেআইএম