মার্কিন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর প্রতিবেশী ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে যুদ্ধ যুদ্ধ উত্তেজনা বিরাজ করছে তাতে কোনো পক্ষ নেবে না পাকিস্তান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী সোমবার ইমরান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এ কথা জানিয়েছেন।
Advertisement
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষে দেয়া এক নীতি নির্ধারণী বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এটা পরিস্কার করে বলতে চাই পাকিস্তানের মাটি অন্য কোনো দেশকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এছাড়া পাকিস্তান আঞ্চলিক কোনো দ্বন্দ্বেরও অংশীদার হতে চায় না।’
পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাববলয় তৈরির কারিগর সোলেইমানি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিহত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সরকারের কেউ এ নিয়ে কথা বললো। কুরেশি বলেন, ‘পাকিস্তান স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে যে আমরা কোনো একতরফা ব্যবস্থা গ্রহণকে সমর্থন করবো না।’
পাকিস্তান সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সোলেইমানির মৃত্যুতে দেশটিতে শিয়া ধর্মাবলম্বীরা বিক্ষোভ করছে। এদিকে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের চিরশত্রু হলেও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ট্রাম্প ও যুবরাজ সালমানের সঙ্গে ইমরানের আছে হৃদ্যতা। ইরানও ঘনিষ্ঠ মিত্র না হলেও শত্রু নয়। সব বিবেবচনায় এমন অবস্থান নিল পাকিস্তান।
Advertisement
এছাড়া ইরানের সঙ্গে সীমান্ত আছে পাকিস্তানের। এটা বিবেচনায় ইরানের সঙ্গে সব সময় কৌশলী কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে পাকিস্তান। সম্প্রতি তেহরান-ওয়াশিংটন আলোচনার জন্য মধ্যস্থতা করতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সঙ্গে বৈঠকও করেন ইমরান খান। তাই এ দ্বন্দ্বে কোনো পক্ষ নেয়া হবে পাকিস্তানের জন্য খুবই স্পর্শকাতর।
পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল ছিল এবং এখনো আছে। এই অঞ্চলটি আর একটি যুদ্ধের ভার বহন করতে পারবে না। আমরা এই অঞ্চলের অংশ এবং তাই এখানে যখন সংঘাত লাগবে তখন পাকিস্তান তা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারবে না।’
ইরান, সৌদি আরব, তুরস্কসহ ওই অঞ্চলের অন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এ নিয়ে তার আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, সোলেইমানির মৃত্যু আফগানিস্তানসহ চারপাশে বড় রকমের সংঘাত তৈরি করতে পারে। তাই এ ধরনের কোনো সংঘাত যাতে তৈরি হতে না পারে তার জন্য কাজ করে যাবে পাকিস্তান।
ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও আইআরজিসির কুদস ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হত্যার কঠোর প্রতিশোধ নেয়া হবে এবং যেকোনো পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী থাকতে হবে বলে ইরান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার দুদিন পর তাদের প্রতিবেশী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বললেন।
Advertisement
সোলেইমানি হত্যার পর প্রতিশোধের হুংকার ছেড়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বলেছেন, ‘বিশ্বের কুচক্রি ও শয়তান রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে অনেক বছর ধরে একনিষ্ঠ ও বীরোচিত জিহাদ চালিয়ে গেছেন সোলেইমানি। যে অপরাধীরা তাদের নোংরা হাত দিয়ে গতরাতে জেনারেল সোলেইমানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’
গত শুক্রবার ভোররাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিমান হামলা চালিয়ে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। ওই হামলায় ইরাকের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাশদ আশ-শাবি’র উপ প্রধান আবু মাহদি আল-মুহানদিস’সহ মোট ১০ জন নিহত হন।
জেনারেল সোলাইমানি ছিলেন খামেনির সবচেয়ে আস্থাভাজন জেনারেলদের একজন। ১৯৯৮ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর তার কৌশলে লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ বাহিনী এবং ইরাকের শিয়াপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোরদার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইরানের।
ইরাকের সশস্ত্র শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেস (পিএমএফ) এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তাদের বাহিনীর উপপ্রধান আবু মাহদি আল মুহাদ্দিসও শহীদ হয়েছেন। মুহাদ্দিস ছিলেন জেনারেল সোলেইমানির বিশ্বস্ত এবং তার উপদেষ্টা। হামলার সময় দুজন একই গাড়িতে ছিলেন।
এসএ/জেআইএম