রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাসব্যাপী ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা পঞ্চম দিনেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর খরা কাটছে না। এবার মেলার শুরু থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর খরা দেখা দিয়েছে। প্রথম চারদিনের মতো পঞ্চম দিন রোববারও মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আনাগোনা খুবই কম। শুরু থেকেই এমন ক্রেতা-দর্শনার্থীর খরায় কিছুটা উদ্বিগ্ন মেলার ইজারা প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
মেলায় আসা দর্শনার্থী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেট্রোরেলের কাজের জন্য মেলাকেন্দ্রিক রাস্তা সংকীর্ণ, মেলায় প্রবেশের টিকিটের দাম বাড়ানো এবং অনেক স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় এখনো জমে ওঠেনি মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলা। তবে দর্শনার্থীদের এমন খরায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মেলার ইজারা প্রতিষ্ঠান। তারা বলছেন, এবারের মেলায় গত বছরের তুলনায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক কম। ইজারা নিয়ে লোকসানের কবলে পড়তে হয় কি না কে জানে।
এদিকে গত চারদিনের মতো পঞ্চম দিন রোববারও (৫ জানুয়ারি) নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টায় মেলার গেট খোলা হয়। তবে সময় গড়িয়ে ঘড়ির কাঁটা বিকেল ৩টায় পৌঁছলেও মেলা প্রাঙ্গণ প্রায় ফাঁকা। যারা মেলায় আসছেন তারাও পণ্য সামগ্রী না কিনে ঘুরে দেখছেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও আগারগাঁওয়ে বছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ১ জানুয়ারি (বুধবার) শুরু হওয়া এবারের মেলায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। মেলায় প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩০ টাকা। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের টিকিটের মূল্য আগের মতোই ২০ টাকা রাখা হয়েছে।
Advertisement
ইস্কাটন থেকে মেলায় আসা রিয়াদ বলেন, ‘এবার মেলায় প্রবেশের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মেলার গুণগত মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। মেলা পাঁচ দিনে গড়ালেও এখনো অনেক স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। নিশ্চয়ই মানুষ ৪০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ফাঁকা স্টল দেখতে আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেলার আয়োজকদের উচিত এমন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যাতে, মেলা শুরু হওয়ার আগেই অংশগ্রহণকারী সব স্টলের কাজ সম্পন্ন হয়। মেলায় এসে স্টল তৈরির কাজ দেখা বিরক্তিকর।’
মিরপুর থেকে মেলায় আসা সবুরা খাতুন বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরেই মেলার প্রথম দিকে আসি। এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা যত কম দেখছি, এর আগে মেলার প্রথম সপ্তাহে এত কম দর্শনার্থী কখনো দেখিনি। মেট্রোরেলের কাজ চলায় মিরপুর থেকে মেলায় আসতে বড় ধরনের যানজটে পড়তে হয়। এটাও মেলায় দর্শনার্থী কম হওয়ার একটি কারণ হতে পারে। তবে আমার মনে হয় এবার টিকিটের দাম বাড়ানো মেলায় দর্শনার্থী কম হওয়ার অন্যতম কারণ।’
মেলায় একটি প্যাভিলিয়নে নারীদের সামগ্রী বিক্রি করা আইমান বলেন, ‘আমি গত বছরও মেলা এসেছিলাম। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবার মেলায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। মেলা পাঁচ দিন হয়ে গেলেও আমাদের বিক্রি তেমন একটা হয়নি। তবে আশা করছি সামনে বিক্রি বাড়বে।’
Advertisement
মেলার ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান মীর ব্রাদার্সের মালিক মীর শহিদুল বলেন, ‘দর্শনার্থীর কথা শুনে লজ্জা দিয়েন না। গড়ে প্রতিদিন চার-পাঁচ হাজার দর্শনার্থী আসছেন। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ১২ হাজারের মতো দর্শনার্থী এসেছিলেন। গত বছর মেলার প্রথম দিনে ২০ হাজারের ওপর দর্শনার্থী ছিল। এবার পরিস্থিতি যা মনে হচ্ছে তাতে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হতে পারে।’
দর্শনার্থী কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজ চলা দর্শনার্থী কম হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। বাণিজ্য মেলায় যে দর্শনার্থী আসেন তার বড় অংশ আসেন মিরপুর অঞ্চল থেকে। মেট্রোরেলের কাজ চলায় এ অঞ্চলের মানুষের মেলায় আসতে বড় ধরনের যানজটে পড়তে হচ্ছে, যা মেলায় আসতে নিরুৎসাহিত করছে।’
টিকিটের দাম বাড়ানোর কারণে মেলায় দর্শনার্থী কম হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিকিটের দাম বাড়ানোর সঙ্গে দর্শনার্থী কম হওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। তবে মেলায় অনেক স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এখন মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগ। সবাই মুহূর্তের মধ্যে জেনে যাচ্ছে মেলার অবস্থা কী। মানুষ নিশ্চয়ই মেলায় স্টল দেখতে আসবে না।’
মেলার আয়োজক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, এবারের মেলায় বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, দুবাই, ইতালি ও তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
এমএএস/আরএস/এমএস