মার্কিন বিমান বাহিনীর একপাক্ষিক হামলায় মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হওয়ার ঘটনাটিকে ‘বর্বরোচিত এবং জঘন্য অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে ঢাকায় ইরান দূতাবাস।
Advertisement
শনিবার (৪ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের জেনে রাখা উচিত যে, গুণ্ডামি ও সীমালঙ্ঘনের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং যারা জেনারেল সোলেইমানির মতো স্বাধীনচেতা ব্যক্তি ও অন্য শহীদদের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করেছে তাদের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।
গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোরে ইরাকে রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোলেইমানি ও ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী আল-শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল মুহান্দিসের বহরে হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এতে তারা দু’জনসহ ৮ জন প্রাণ হারান।
ইরান দূতাবাসের বিবৃতিতে কোরআনের দু’টি আয়াত উল্লেখ করে বলা হয়, ‘ইরানের ঢাকাস্থ দূতাবাস ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনগুলোতে ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের নির্মূল অভিযানের অক্লান্ত সৈনিক, ইসলামের বীর সেপাহসালার শহীদ জেনারেল কাসেম সোলেইমানির বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। জেনারেল সোলেইমানি শুধু ইরানি জনগণের নয়; বরং তিনি বিশ্বের সকল মুসলমান এবং নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের মর্যাদা ও গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। মার্কিনিরা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সংঘাতের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে দিতে অত্যন্ত বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে ইরানের কুদ্স ব্রিগেডের এই স্বনামধন্য কমান্ডারকে শহীদ করেছে। তারা এই জঘন্য অপরাধের মাধ্যমে ইরাকের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে, আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি পদদলিত করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে চেয়েছে। তবে এই জঘন্য অপরাধের নির্বোধ হোতারা যেন মনে রাখে যে, তারা তাদের অপরাধের দাঁতভাঙ্গা জবাব পাবে।’
Advertisement
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জেনারেল সোলেইমানির শাহাদাতের ঘটনা আবারও এ কথা প্রমাণ করল যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের স্বাধীনচেতা জাতিগুলোর কাছে সর্বাধিক ঘৃণ্য রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের জেনে রাখা উচিত যে, গুণ্ডামি ও সীমালঙ্ঘনের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং যারা জেনারেল সোলেইমানির মতো স্বাধীনচেতা ব্যক্তি ও অন্য শহীদদের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করেছে তাদের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’
‘শহীদ জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ইসরায়েল, আলকায়দা ও আইএস জঙ্গিদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ইরাক ও সিরিয়াকে আইএসের মতো রক্তপিপাসু জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্ত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তার একমাত্র অপরাধ ছিল, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লালিত জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস নির্মূলে আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্র তাকে পথের কাঁটা মনে করেছিল। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এই মহান শহীদের পবিত্র রক্ত প্রতিরোধ সংগ্রামকে আগের চেয়ে বেগবান করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধংদেহী নীতিকে অকার্যকর করতে সাহায্য করবে।’
দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জেনারেল কাসেম সোলেইমানি তার পুরো বরকতময় জীবন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে নিবেদিত করেছেন। নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের জন্য শাহাদাতের উচ্চ মর্যাদা তার প্রাপ্য ছিল। এই ঘটনায় যারা শাহাদাত বরণ করেছেন বিশেষ করে শহীদ জেনারেল সোলেইমানি ও শহীদ আবু মাহদি আল মুহান্দিসের নাম ও স্মৃতি অনন্তকাল বিশ্বের স্বাধীনচেতা মানুষের মনে অমর হয়ে থাকবে, আর এই অপরাধের যারা হোতা তারা চিরদিন ইতিহাসে ধিকৃত হয়ে থাকবে।’
জেপি/এইচএ/পিআর
Advertisement