বড় দুই বোন তখন চলচ্চিত্রে তুমুল জনপ্রিয়। চোখের সামনে দেখছেন বড় বড় সব তারকারা বাড়িতে আসেন যান। তার দুই বোনের বিরাট পরিচিতি। বাইরে বের হলেই মাুনষের ভিড় জমে যাচ্ছে তাদের ঘিরে। একটা অন্য জীবন। একটা অন্যরকম আকর্ষণ।
Advertisement
সেই আকর্ষণে তিনিও ভাসলেন। ফ্যাশনেবল এবং স্টাইলিশ ছোট বোনটিও বড় দুই বোনের পথ ধরে শোবিজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেন। তবে শুরুতেই চলচ্চিত্রে নয়, ছোটপর্দায় যাত্রা করলেন। মডেল হিসেবে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন। এরপর কিছু নাটকেও কাজ করা হলো।
ইন্ডাস্ট্রিতে তখন তার অল্প পরিচিতি। তবে নিজের নামকে তখনো পরিচিত করে তুলতে পারেননি। সবাই সুপারস্টার সুচন্দা-ববিতার বোন বলেই চিনতেন। সেই তিনি ১৯৮৫ সালের ‘তিন কন্যা’ ছবি দিয়ে সবার কাছে চম্পা নামে হাজির হলেন। প্রথম ছবিতেই জানান দিলেন অভিনয়ের পথে অনেকদূর তার গন্তব্য।
হলোও তাই। আশির মাঝামাঝিতে সিনেমায় নাম লেখানো চম্পা আজও অভিনয়কে আঁকড়ে ধরে আছেন। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার তাকে দিয়েছে সুপারস্টারের রঙিন জীবন, আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা রকম স্বীকৃতি। আর কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা তো আছেই।
Advertisement
নন্দিত অভিনেত্রী চম্পার আজ জন্মদিন। ১৯৬৫ সালের ৫ জানুয়ারি তার জন্ম। সেই হিসেবে এবার ৫৪ বছরে পা রাখলেন সুহাসীনি চম্পা।
কীভাবে কাটছে জন্মদিন? জবাবে আজ রোববার দুপুরে জাগো নিউজকে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘জন্মদিনটা স্পেশাল হয়ে উঠে মানুষের ভালোবাসায়। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকেই শুরু হয়েছে শুভেচ্ছার মিছিল। শোবিজের মানুষেরা, পরিবার, বন্ধুরা ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
অনেক ভক্তও কেমন করে জানি ফোন নাম্বার পেয়েছে। কী চমৎকার করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সবাই। প্রচুর ফুল এসেছে। ফুল দিয়ে বাসা ভর্তি। রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে কেক কাটা। এখন পর্যন্ত কয়টা কেক কাটা হলো নিজেও জানি না। আমি অভিভূত। মুগ্ধ। সবার কাছে দোয়া চাই যেন সুস্থ থাকি, আমৃত্যু অভিনয় করে যেতে পারি।’
এই যে এত এত ভালোবাসা চারদিকে, জীবনের এই সময়ে এসে অনুভূতিটা কেমন? চম্পা বলেন, ‘জীবন সুন্দর। অভিনয় করে তৃপ্ত আমি। অনেক কিছুই পেয়েছি অভিনয় জীবনে। দেশের বাইরে চমৎকার কিছু সিনেমায় কাজ করেছি। তবে আফসোস হয় এই সময়ে এসে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবো তেমন সিনেমা হচ্ছে না। আমাদের সিনেমার অবস্থা খুবই করুণ হয়ে গেছে এটা মানতে পারি না। প্রত্যাশা করি, খুব দ্রুতই সিনেমার সুদিন আসুক।’
Advertisement
এবারের জন্মদিনের পরিকল্পনা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সবার ফুল ও কেক গ্রহণ করছি। দুপুরে নাতিদের সঙ্গে কেক কাটবো, খাবো একসঙ্গে। আর রাতে তিনবোন মিলে কোথাও ডিনার করবো। কোথায় যাবো সেটা ঠিক করবেন ববিতা আপা।’
১৯৮৫ সাল থেকে সিনেমা জীবন শুরু করা চম্পা জনপ্রিয় বহু নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন। তবে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও মান্নার সঙ্গে তার জুটি দর্শকপ্রিয় ছিলো। বিশেষ করে কাঞ্চনের বিপরীতে চম্পা মানেই একটা সময় হিট সিনেমার আভাস মিলতো।
এছাড়াও চম্পা কাজ করেছেন সত্যজিত রায়ের ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের ‘টার্গেট’, বুদ্ধদেব দাশ গুপ্তের ‘লালদরজা’ সিনেমাতে। দুই বাংলার প্রযোজনায় গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন চম্পা। এই ছবিটি তার ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে। এর হাত ধরে পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
এছাড়াও অন্য জীবন (১৯৯৫) ও উত্তরের খেপ (২০০০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এবং শাস্তি (২০০৫) ও চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন চম্পা।
সর্বশেষ তিনি আলোচনায় আসেন দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘মনের মানুষ’ দিয়ে। গৌতম ঘোষ পরিচালিত এই ছবিতে তিনি লালন সাঁইজির চরিত্রে প্রসেনজিতের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো সিনেমাতে তাকে দেখা যায়নি।
হঠাৎ হঠাৎ হাজির হয়েছেন ছোটপর্দায়। তবে নতুন করে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছেন তিনি। তারমধ্যে সিয়াম অভিনীত ‘শান’ ছবিটি উল্লেখযোগ্য।
এলএ/পিআর