বিনোদন

যুদ্ধ নিয়ে যত বিখ্যাত সিনেমা

সিনেমায় উঠে আসে জীবনের প্রতিচ্ছবি। জীবন-সংগ্রামকে ছাপিয়ে কখনও তাতে ভেসে ওঠে বিজ্ঞানের নানা কল্পকাহিনী ও দুঃসাহসিক অভিযানের কথা। এছাড়াও সিনেমায় বরাবরই ঐতিহাসিক যুদ্ধ কিংবা বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ফুটে ওঠে নানাভাবে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও নির্মিত হয়েছে অসংখ্য সিনেমা। বিভিন্ন দেশের সে রকমই গৌরবময় যুদ্ধভিত্তিক কিছু সিনেমা নিয়ে জাগো নিউজের এই আয়োজন।

Advertisement

রোম, ওপেন সিটি (১৯৪৫)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানবিক বিপর্যয়ের করুণ চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রবার্ট রোসেলিনির মাস্টারপিস ‘রোম ওপেন সিটি’ ছবিতে। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর রোম দখল, ইতালিয়ানদের সাহসী প্রতিরোধ নিখুঁতভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক। ছবিটিতে যুদ্ধকালীন নির্মমতাও সফলতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন রোসেলিনি। দাস বুট (১৯৮১)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ঘিরে নির্মিত জার্মানির এই ছবিতে একঘেঁয়ে যুদ্ধের ছবি থেকে দর্শকদের পরিত্রাণ দিয়েছেন পরিচালক উলফগ্যাং পিটারসন। সাবমেরিন নিয়ে যুদ্ধ করার টান টান উত্তেজনা, সাবমেরিনে আটকে যাওয়ার ভয়, সাহসী প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা এসব কিছু দেখতে পাওয়া যায় এই ছবিটিতে।

Advertisement

দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই (১৯৫৭)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মায় জাপানি ক্যাম্পে অবরুদ্ধ ব্রিটিশ বন্দিদের কাহিনীনির্ভর ছবি ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়া’। অস্কারে সেরা ছবিসহ সাতটি পুরস্কার পায় এটি।

অ্যাপোকেলিপস নাউ (১৯৭৯)

গডফাদার ছবির পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার একটি রিয়েলিস্টিক মুভি এটি। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকান সেনাদের ভূমিকা, আমেরিকার জবরদস্তিমূলক পররাষ্ট্রনীতিই যেন ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। ছবিটিতে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মার্লোন ব্রান্ডো।

Advertisement

দ্য ব্যটেল অব আলজিয়ার্স (১৯৬৬)

ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য আলজেরিয়ার সাধারণ মানুষদের লড়াইয়ে নামার কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই ছবিটি। গেরিলা লড়াইয়ের এক অনবদ্য উপস্থাপনা বলা চলে ছবিটিকে। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের আগে পেন্টাগনে এই ছবিটি দেখেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও।

প্লাটুন (১৯৮৬)

ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে উপভোগ্য একটি ছবি প্লাটুন। যুদ্ধের ভয়াবহতার পাশাপাশি পরিচালক অলিভার স্টোন নৈতিকতা ও মানবিকতাকেও দারুণভাবে তুলে ধরেছেন ছবিটিতে।

শিন্ডলারস লিস্ট (১৯৯৩)

স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সত্য কাহিনী অবলম্বনে শিন্ডলারস লিস্ট ছবিটি নির্মিত হয়েছে। অস্কার শিন্ডলার জার্মানির এক ব্যবসায়ী, যিনি হিটলার বাহিনীর গণহত্যা থেকে কমপক্ষে এক হাজার পোলিশ ইহুদিকে রক্ষা করেছেন তার ফ্যাক্টরিতে কাজ দিয়ে। সর্বকালের অন্যতম সেরা ছবি ধরা হয় এটিকে। ব্রেভ হার্ট (১৯৯৫)

ইতিহাসনির্ভর হৃদয়গ্রাহী একটি ছবি ‘ব্রেভ হার্ট’ । ১৩ শতকের স্কটিশ যোদ্ধা উইলিয়াম ওয়ালেস ইংল্যান্ডের রাজার কাছ থেকে স্কটদের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ছবিটিতে সেই কাহিনী উঠে এসেছে। সেরা ছবি, সেরা পরিচালকসহ (মেল গিবসন) অস্কারে ছবিটি পাঁচটি পুরস্কার পায় ।

সেভিং প্রাইভেট রায়ান (১৯৯৮)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নরমান্ডি হামলা নিয়ে এ ছবির কাহিনী এগিয়েছে। যুদ্ধ, তার সঙ্গে আবেগের লড়াইও আছে এতে। প্রাইভেট রায়ানের ভাইয়েরা যুদ্ধে নিহত হয়। তাই পরিবারের জীবিত শেষ ভাইটি যেন যুদ্ধে নিহত না হয় সেই চেষ্টাই করে চলেন অধিনায়ক। সেরা পরিচালকসহ অস্কারে পাঁচটি পুরস্কার পায় ছবিটি। যুদ্ধের ছবি হিসেবে এখন পর্যন্ত ব্যবসায়িক সাফল্যের শীর্ষে আছে এই ছবিটি। দ্য পিয়ানিস্ট (২০০২)

মুভিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সত্য কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করা। সিপ্লতসম্যান (এড্রিয়েন ব্রোডি) নামে মেধাবী একজন পিয়ানো বাদক ও ইহুদির জীবন সংগ্রামের কাহিনী ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। পরিচালক রোমান পোলানস্কি’র নির্মিত সবচেয়ে সেরা মুভি এই পিয়ানিস্ট।

ডিয়ার হান্টার (১৯৭৮)

ভিয়েতনাম যুদ্ধকে ঘিরে আরেকটি আলোচিত ছবি ডিয়ার হান্টার। রবার্ট ডি নিরো, ক্রিস্টোফার ওয়াকেন, মেরিল স্ট্রিপ অভিনীত এই ছবিটি সেরা ছবি, সেরা পরিচালকসহ অস্কারে পাঁচটি পুরস্কার অর্জন করে।

দ্য হার্ট লকার (২০০৮)

পরিচালক ক্যাথরিন বিগোলর ইরাক যুদ্ধের ওপর নির্মিত ছবি দ্য হার্ট লকার। ছবিটিতে ইরাক যুদ্ধে নিয়োজিত যুদ্ধাহত আমেরিকান বিস্ফোরক দ্রব্য নিষ্পত্তিকরণ একটি টিমের করুণ জীবন সংগ্রাম ফুটে উঠেছে। বেস্ট পিকচার জয়ী নারী পরিচালকের এই ছবিটি ৪৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।

গ্রেভ অব দ্য ফায়ার ফ্লাইস (১৯৯৮)

অ্যানিমেশন এই মুভিটির প্রশংসা করতেই হয়। যুদ্ধবিগ্রহ শিশু-কিশোর জীবনের ওপর যে কত প্রভাব ফেলে তা এই মুভিটি না দেখলে বোঝা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বোমা হামলায় নিজ শহর থেকে বিতাড়িত জাপানি দুই শিশুর বেঁচে থাকার করুণ দৃশ্য রয়েছে গ্রেভ অব দ্য ফায়ার ফ্লাইসে।

ফিউরি (২০১৪)

এই ছবিতে ‘ওয়্যারডেডি’ সৈনিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ব্র্যাড পিট। পরিচালক ডেভিড আয়ার ছবিটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন দারুণ নিপুণতায়।

জিরো ডার্ক থার্টি (২০১২)

আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য দায়ী করা হয় আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে। পরে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনীর বিশেষ অভিযানে নিহত হন তিনি। জিরো ডার্ক থার্টিতে সেই দৃশ্য উঠে এসেছে। খুবই শান্ত ধাঁচের যুদ্ধ ছবি এটি।

দ্য কিলিং ফিল্ডস (১৯৮৪)

নিউইয়র্ক টাইমসের আমেরিকান সাংবাদিক সিডনি স্ক্যানবার্গ ও কম্বোডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক ডিথ প্রানের অভিজ্ঞতার আলোকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। কম্বোডিয়ায় ভিয়েতনামের খামাররুজ বাহিনীর আক্রমণে প্রায় ১০ লাখ কম্বোডিয়ান নিহত হন। দ্য কিলিং ফিল্ডস ছবিতে সেই বর্বরোচিত দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক রোল্যান্ড জোয়েফ।

ডাউনফল (২০০৪)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে ১৯৪৫ সালে বার্লিনের একটি বাঙ্কারে গুলি করে আত্মহত্যা করেছিলেন অ্যাডলফ হিটলার। হিটলারের শেষ দিনগুলোর বর্ণনা রয়েছে এই ছবিতে। তবে ছবিতে চরম ইহুদিবিদ্বেষী হিটলারের মানবিক দিকগুলো উঠে আসায় সমালোচনা রয়েছে এই ছবি ঘিরে।

এছাড়াও যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত বিখ্যাত ছবিগুলো হলো- দ্য ইমিটেশন গেম (২০১৪), অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট (১৯৩০), ডানকার্ক (২০১৭), ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস (২০০৯), দ্য গ্রেট এসকেপ (১৯৬৩), ডার্কেস্ট আওয়ার (২০১৭), দ্য থিন রেড লাইন (১৯৯৮) ইত্যাদি।

এসআর/পিআর