ক্রিকেট বিশ্ব প্রতিনিয়ত দেখে কোটি মানুষের উচ্ছ্বাস। লক্ষ মানুষের হতাশা। কিন্তু মাঝে মধ্যে দেখে কারো কারো কান্না! তাদের সেই চোখের জল কখনও আনন্দের। কখনও বেদনার। সময়ের স্রোতে ভেসে যায় সেই সব চোখের জল। কিন্তু স্মৃতির ফ্রেমবন্দী হয়ে থাকে কিছু কিছু মানুষের কান্নার ছবি।
Advertisement
ফ্ল্যাশ ব্যাকে অনেক বিখ্যাত সব মুখ ভেসে ওঠে। হান্সি ক্রোনিয়ে, কপিল দেব, মোহাম্মদ আশরাফুল থেকে স্টিভ স্মিথ।এমন কী ব্যাট হাতে বোলারদের সামনে যিনি রীতিমত কসাই, সেই ডেভিড ওর্য়ানারকেও কাঁদতে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব! কেউ কেঁদেছেন অপরাধবোধ থেকে অনুশোচনা আর অনুতাপের আগুনে পুড়ে। কেউ কেঁদেছেন মিথ্যা অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে। কিন্তু তাদের কান্নার কারণ যাই হোক, মানুষগুলোকে ভুলে থাকা কঠিন ক্রিকেট বিশ্বের জন্য।
আশরাফুল কেঁদেছিলেন বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায় স্বীকার করে। কপিল দেব কেঁদেছিলেন তার টিমমেট মনোজ প্রভাকর যখন তার বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনেছিলেন। হান্সি ক্রেনিয়ে কাঠিন্যভরা মুখে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ অস্বীকার করার পরই হৃদয়পুরে অন্তরাত্মার হাজার প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে সত্য স্বীকার করতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি হান্সি।
প্রায় এক যুগ পর সেরকম এক দৃশ্য ফিরে এসেছিল বাংলাদেশের মানুষের সামনে। কাঁদলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সেটা নিজের অপরাধ স্বীকার করতে গিয়ে। তারপর সিডনি এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে শিশুর মত কাঁদতে দেখলো বিশ্ব স্টিভ স্মিথকে। অস্ট্রেলিয়ান নেভার সে ডাই দর্শনের কাঠিন্য উধাও সেই কান্নায়! কাঁদলেন ওর্য়ানারও। বল টেম্পারিং কাণ্ডে তাদের কান্না। তারপর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এরপর ওরা ফিরলেন।
Advertisement
সেটা পুরোন গল্প। কিন্তু একের পর এক যে রুপকথা লিখে যাচ্ছেন স্মিথ-ওর্য়ানাররা। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়, অশ্রু আর আগুনের অন্য এক শিল্পের জন্ম হচ্ছে ক্রিকেট মাঠে। আর হান্সি ক্রোনিয়ের কান্না থেমে গেছে। তারপর তিনি কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন জীবনের বাইশ গজ থেকে। কী মর্মান্তিক সেই বিয়োগ গাথা! বিমান দুর্ঘটনায় সব শেষ তার। সেখান থেকে শুরু হান্সির অনন্তযাত্রা । তিনি প্রথম ক্রিকেট পথিক যিনি ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায় স্বীকার করে বছর দুয়েকের মধ্যে স্বর্গপথ যাত্রী।
এ লেখা যখন ব্রাউজিংয়ের জন্য পাঠকের হাতে তখন কেপটাউনে টেস্ট চলছে। সিডনিতে স্টিভ স্মিথ-ওর্য়ানাররা ক্রিকেট গ্রহে রাজত্ব ফিরে পেতে লড়ছেন। মোহাম্মদ আশরাফুল মিরপুরে প্র্যাকটিস করছেন ক্লাব ক্রিকেটে ভাল কিছু করার জন্য। কিন্তু ক্রিকেট গ্রহ মনে হয় অস্ফুটস্বরে একটা আর্তনাদ করে চলেছে। তোমরা কেঁদেছিলে। কিন্তু তোমরাও আবার অনেকের অনুপ্রেরণা! ল্যাবুসেন যেমন বলেই ফেললেন, তার অন্যতম অনুপ্রেরণা স্টিভ' সুপার' স্মিথ। ল্যাবুসেন যখন বাইশ গজে স্মিথের সঙ্গী হচ্ছেন তা দেখে মনে হয়; এ এক আনন্দ ক্রীড়ার সঙ্গী। আর স্মিথের কান্না ছিল ক্রিকেট কাননের ক্রন্দন। অনুশোচনার কান্না কখনও কখনও নিজের এবং অন্যের জন্য অনুপ্রেরণার কান্না হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের দেশজ ক্রিকেটে কে কার অনুপ্রেরণা? এই প্রশ্ন নিয়ে জরিপ করা করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গত এক দশকে উত্থানে যার বড় একটা ভূমিকা, যিনি এদেশের তরুণদের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন, যিনি ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ফেরি করে বেড়িয়েছেন, সেই সাকিব আল হাসান বুকিদের ফোনালাপের তথ্য গোপন করার দায়ে নিষিদ্ধ। কিন্তু বিপিএল দেখে মনে হয়; বাংলার ক্রিকেটীয় তপোবন কাঁদছে। আগামী বিপিএলেই ফিরে আসো সাকিব।
লেখক: সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক।
Advertisement
এইচআর/পিআর