প্রবাস

প্রথমবার বলিভিয়ায় বিজয় দিবস উদযাপন

ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে এই প্রথমবারের মতো বলিভিয়ায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। দূতাবাসের আওতাধীন ছয়টি দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন, তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন ও দূতাবাসের কনস্যুলারসহ সার্বিক সেবা প্রবাসী বাংলাদেশীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার অব্যাহত চেষ্টার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়।

Advertisement

গত দুই বছরে এ দেশগুলোর বিভিন্ন শহরে নিয়মিত কনস্যুলার ক্যাম্প পরিচালনা ছাড়াও ওইসব শহরে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোও পালন করা হচ্ছে।

রাজধানী ব্রাসিলিয়ার বাইরে ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য নগরী সাঁও পাওলোতে মহান ভাষাশহীদ দিবস পালন, প্যারাগুয়ের সিউদাদ দেল এস্তে শহরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন, বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা শহরে এবারের মহান বিজয় দিবস উদযাপন ইত্যাদি দূতাবাসের এ চেষ্টারই অংশ। পরবর্তীতে চিলিতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

দূতাবাসের ঐতিহাসিক এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা দলমত নির্বিশেষে ১৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা শহরের এক সম্মেলন ভবনে মিলিত হন। এর আগে একই ভবনে দিনব্যাপী কনস্যুলার ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। কনস্যুলার সেবা প্রবাসীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সেবাগ্রহণকারীরা ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাসকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং এ সেবা ভবিষ্যতেও চালু রাখার দাবি জানান।

Advertisement

ক্যাম্পে উপস্থিত রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং এখন থেকে নিয়মিত বলিভিয়ায় কনস্যুলার ক্যাম্প পাঠানো হবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রবাসীবান্ধব সরকারের সময়ে দূতাবাস বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অতীতের অবহেলার পরিবর্তে সক্রিয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এ নতুন ধারা আগামীতে আরও জোরদার হবে।

বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় দূতাবাস, বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি আর তাদের বলিভিয়ান বন্ধুদের সম্মিলিত প্রয়াসে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ ও বলিভিয়ার জাতীয় সংগীত বাজিয়ে এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পড়ে শোনানো হয়।

মুক্ত আলোচনাপর্বে বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা মাতৃভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও কীভাবে দেশের মঙ্গলের জন্য যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছেন, দুর্যোগের সময় স্বদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বা রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে কীভাবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। দূতাবাসের এ অভিনব উদ্যোগের জন্য তারা রাষ্ট্রদূতকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং ব্রাজিলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে নবপ্রতিষ্ঠিত এ সম্পর্কের যাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা রূপায়নে সবাই একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Advertisement

রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান তার সমাপনী বক্তব্যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লক্ষাধিক নারী মুক্তিযোদ্ধা ও চার জাতীয় নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তিনি সমবেত বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।

দূতাবাসের আহ্বানে বিপুলভাবে সাড়া দিয়ে প্রথমবার আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সফল করে তোলার জন্য তিনি সর্বস্তরের বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে এ ধারা ভবিষ্যতেও বজায় রাখা হবে মর্মে রাষ্ট্রদূত বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন।

বলিভিয়ার সান্তা ক্রূজ দে লা সিয়েরা শহরে বিজয় দিবসের এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল স্থানীয় বলিভিয়ান শিল্পীদের পরিবেশনায় বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গান ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল’- এর সঙ্গে নাচ পরিবেশনা। জমজমাট এ সাংস্কৃতিক পর্বে এক ঝাঁক শিল্পীর উপস্থাপনায় বাংলা ও বলিভিয়ান সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকবৃন্দকে মুগ্ধ করে। অন্যসব বাঙালি আয়োজনের মতো এ অনুষ্ঠানও শেষ হয় বাঙালি আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে।

সুমন খান/এমএসএইচ