দিনের পর দিন রাজধানী ঢাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে জলাভূমিও। ঢাকা শহরের কেন্দ্রীয় নগর এলাকায় বর্তমানে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা মোট এলাকার প্রায় ৮২ ভাগ এবং জলাভূমির পরিমাণ মোট এলাকার প্রায় ৪.৩৮ ভাগ।
Advertisement
‘ঢাকা শহরের বায়ু, পরিবেশ ও বসবাসযোগ্যতা প্রেক্ষিত : সবুজ এলাকা, জলাশয়, খোলা উদ্যান ও কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার বিদ্যমান অবস্থা’ বিষয়ক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠেছে এসেছে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, প্রয়োজনের তুলনায় জলজ ভূমি ও সবুজ এলাকার পরিমাণ অনেকাংশই কম। জলজ ভূমি ও খালি জায়গা কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ঢাকা এখন বাসযোগ্যতার প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক মানদণ্ডে তলানিতে অবস্থান করছে। একটি আদর্শ শহরে ১৫-২০ ভাগ সবুজ এলাকা এবং ১০-১৫ ভাগ জলাশয় থাকা আবশ্যক। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ক্রমান্বয়ে ঢাকা শহরের সবুজ এলাকা ও জলাশয়গুলো কংক্রিটের আচ্ছাদনে ঘিরে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবুজ এলাকা, জলাশয় ও নির্মিত এলাকার ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান।
Advertisement
তিনি বলেন, একটি নগরের বাসযোগ্যতা নির্ভর করে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার ওপর। নগর পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের কর্মকাণ্ডের ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো এবং প্রাকৃতিক উপাদানসমূহের (পানি, বায়ু, মাটি, জলাশয় ইত্যাদি) দূষণ রোধ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা। অপরিকল্পিত নগরায়নের প্রভাবে ঢাকা শহর ও সংলগ্ন এলাকার কৃষিজমি, জলাশয়সহ নিচু এলাকাগুলো এবং সবুজের আচ্ছাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে শিল্প কারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইটভাটা এবং মাত্রাতিরিক্ত নির্মাণ কাজ ঢাকার বায়ু ও পরিবেশ দূষণের পরিমাণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ড. আদিল বলেন, ভূমি ব্যবহারের তুলনামূলক চিত্র থেকে এটি প্রতীয়মান যে, ১৯৯৯ সালে জলাভূমির শতকরা হার ১৪.২৫%, সবুজ আচ্ছাদন ৬.৬৯%, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ৬৪.৯৯% এবং খোলা জায়গা ১৪.০৭%, যা গত ২০ বছরে পরিবর্তিত হয়ে ২০১৯ সালে জলাভূমির শতকরা হার ৪.৩৮%, সবুজ আচ্ছাদন ৯.২০%, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ৮১.৮২% এবং খোলা জায়গা ৪.৬১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বারিধারা, বনানী, গুলশান, মহাখালী ও বাড্ডা এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৮৮.৪৬%, সেই তুলনায় সবুজ আচ্ছাদন মাত্র ০.৮৪%। বড় বাগ, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও ইব্রাহীমপুর এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৯৯.১৪%। খিলগাঁও, গড়ান, মেরাদিয়া, বাসাবো ও রাজারবাগ এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৯৭.৬০%, সেই তুলনায় সবুজ আচ্ছাদন মাত্র ০.৯০%।
সোয়ারী ঘাট ও বংশাল এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ১০০% এবং সিদ্দিক বাজার ও শাখারী বাজার এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৯৯.৪২%, সেই তুলনায় এসব এলাকায় কোনো সবুজ আচ্ছাদিত এলাকা নেই, জলজ এলাকার পরিমাণও অতি নগণ্য। এই উপাত্তগুলো মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার ওপর গুরুত্বারোপ এবং অন্যান্য শহরে যেন এই পরিণতি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে।
Advertisement
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপির সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, পরিকল্পনাবিদ ড. চৌধুরী যাবের সাদেক, সাবেক সভপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম আবুল কালাম, সাবেক সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বিআইপির বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ আসাদুজ্জামান, পরিকল্পনাবিদ ইসরাত জাহান প্রমুখ।
এএস/এমএসএইচ