মার্কিন হামলায় নিহত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ও ইরাকের প্যারা মিলিটারি কমান্ডার আবু মাহদি আল-মুহান্দিসের জানাজায় বাগদাদের শোকাহত হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। শনিবার বাগদাদের খাধিমিয়ায় কালো পোষাক পরে হাজারও মানুষ তাদের জানাজায় অংশ নেন।
Advertisement
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, বাগদাদে জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা কালো পোষাকে ও ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের (পিএমএফ) পতাকা হাতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংস চেয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন। বাগদাদের খাধিমিয়ায় শিয়া মতাবলম্বীদের উপাসনালয়ে একত্রিত হয়ে ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ও পিএমএফের কমান্ডারসহ নিহত অন্যান্যদের মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তেহরানের এলিট ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানি ইরানের আঞ্চলিক প্রভাববিস্তারের মূলনায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিমান হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।হামলায় পিএমএফ কমান্ডার আবু মাহদি আল-মুহান্দিস ও সোলেইমানির একজন উপদেষ্টাও মারা যান।
ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ এই জেনারেলের ওপর মার্কিন হামলা এমন এক সময় চালানো হয়; যার মাত্র দুদিন আগে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় পিএমএফের সমর্থকরা। গত রোববার ইরাক এবং সিরিয়ায় মিলিশিয়া গোষ্ঠী কাটাইব হেজবুল্লাহর স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার প্রতিবাদে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
Advertisement
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে পিএমএফের সদস্য ও সমর্থকদের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন আল-মুহান্দিসও। নিজেকে পিএমএফের সদস্য হিসেবে দাবি করে ৩৪ বছর বয়সী আমজাদ হামাওদ আলজাজিরাকে বলেন, সোলেইমানি এবং মুহান্দিসের মতো দু'জন সাহসী যোদ্ধার মৃত্যুতে আমরা এখানে শোক জানাতে উপস্থিত হয়েছি।
তিনি বলেন, তারা দু'জনই বিশ্বের শিয়া সম্প্রদায় এবং ইরাকের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই পিএমএফের সমর্থক। ইরান সমর্থিত ইরাকের সশস্ত্র এই মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সদস্যরা জানাজা শেষে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে পদযাত্রা করার কথা রয়েছে।
সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলনের মুখে গত নভেম্বরে ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আদেল আবদেল মাহদি। বর্তমানে দেশটির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাগদাদে ইরানি জেনারেলের জানাজায় অংশ নিয়েছেন।
শুক্রবারের ওই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে। উত্তেজনা শুরু হয়েছে প্রতিবেশি দেশগুলোর মাঝেও। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে তার গ্রীস সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন।
Advertisement
শুধু তাই নয়, মন্ত্রিসভার সদস্যদের জরুরি বৈঠকে তলব করার পর ইরানের সেনা জেনারেলের মৃত্যু এবং মার্কিন হামলা নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া হামলার আশঙ্কায় দেশটির জনপ্রিয় দুটি পর্যটন কেন্দ্রও বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানাজায় অংশ নেয়া পিএমএফের কিছু সমর্থক ও ইরাকিরা মার্কিন ওই হামলার জবাব দিতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বাগদাদে হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
এসআইএস/জেআইএম