ঝিনাইদহ ল্যান্ড সার্ভে (ভূমি জরিপ) ট্রাইব্যুনালে আপস ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে বহুগুণে বেড়েছে মামলা নিষ্পত্তির হার। বিগত বছরে মামলা নিষ্পত্তির হার ছিল ৩২৪ শতাংশ। যা ২০১৮ সালের তুলনায় ১১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে ১১ মাসে মামলা দায়ের হয়েছে ৩৯৫টি। এ সময়ে নতুন ও পুরাতন মিলে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ১৬৭টি। মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যা অভাবনীয় সাফল্য। গত বছরের শেষে উক্ত ভূমি জরিপ ট্রইব্যুনালের মামলা নিষ্পত্তির পরিসংখ্যানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ঝিনাইদহ আদালতের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. তাজুল ইসলামের যোগদানের পর থেকে এ সাফল্য আসে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর উক্ত আদালতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে যোগদান করেন তাজুল ইসলাম। এরপর ২০১৯ সালের ১১ মাসে প্রায় ১২০০ মামলা নিষ্পত্তি করেন। যার মধ্যে ৬৮০টি মামলা ছিল পুরনো। যেগুলো ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালে দায়ের হওয়া। এগুলোকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তি করেন।
এ সময় তাকে মিস মামলাসহ প্রায় দেড় হাজার সাক্ষীর সাক্ষ্য নিতে হয়েছে। বিকল্প বিরোধ ও আপসের মাধ্যমে ১১ মাসে শতাধিক ভূমি জরিপ মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যার মধ্যে ভূমি জরিপ কেসের সঙ্গে অনেকের আরও দেওয়ানি মোকদ্দমা রয়েছে। অনেক ল্যান্ড সার্ভে কেস দায়েরের মাত্র ৬ মাসের মধ্যে তিনি নিষ্পত্তি করেছেন। তাজুল ইসলাম ইতোপূর্বে খুলনা, ঢাকা, মেহেরপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সারাদেশের ৪২টি জেলার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে মোট তিন লাখ তিন হাজার ৩৫টি মামলা। উক্ত ৪২টি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে ঝিনাইদহে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মাস ওয়ারি নিষ্পত্তির হিসাব গড়ে প্রায় শতাধিক। যেমন, জানুয়ারি মাসে ১১৫, ফেব্রুয়ারিতে ৭৩, মার্চে ৮৬, এপ্রিলে ৮৭, মে'তে ১১৫, জুনে ৯৬, জুলাইয়ে ১২৫, আগস্টে ৮৪টি, সেপ্টেম্বরে ১১৫, অক্টোবরে ১৪৩, নভেম্বরে ১১৬ এবং ডিসেম্বর মাসে ১ দিনে ৪টি ও অন্যান্য কেস সহ মোট প্রায় ১২০০-এর অধিক টিএলএসটি কেস নিষ্পত্তি করেছেন বিচারক তাজুল ইসলাম।
Advertisement
তাছাড়া সারা দেশের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সমূহের চেয়ে ঝিনাইদহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে ১৯৩৮ টিএলএসটি কেস রয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান গ্রামের একটি ভূমি জরিপ মামলা নং ৯৫৮/২০১৬। মামলার বাদী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের কেসটি বিচারক নিজে উদ্যোগ নিয়ে বিবাদীদের সঙ্গে আপস করে দেন। আমি এ আদালতে ২০১৬ সালে মামলার জন্য আসি এবং বেশ কয়েকটি তারিখ চলে যায়। এ বিচারক এসে চার-পাঁচটি তারিখের মধ্যেই আমাদের মামলাটি আপস করে দেন। আমি আপসের মাধ্যমে আমার দাবিকৃত জমি বুঝে পেয়েছি। এজন্য আমি বিচারক, আইনজীবীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।'
ঝিনাইদহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের এজিপি বেগম দীল আফরোজ বলেন, 'ভূমি সংক্রান্ত বিবাদ যত নিষ্পত্তি হবে তত সমাজে শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠিত হবে। সারাদেশের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের চেয়ে ঝিনাইদহে মামলা নিষ্পত্তির হার তুলনামূলকভাবে বেশি।'
ঝিনাইদহ জেলার সরকারি কৌঁসুলি জিপি বিকাশ কুমার ঘোষ বলেন, 'সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলে উন্নয়ন টেকসই হয়। সারা দেশের চেয়ে ঝিনাইদহে মামলা নিষ্পত্তির হার অত্যন্ত সন্তোষজনক।'
Advertisement
এ বিষয়ে বিচারক মো. তাজুল ইসলাম জানান, সময়মতো অফিস করলে এবং সময়ের কাজ সময়ে করলে, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, 'আমার আদালতে সাক্ষী এলে ফেরত যায় না। আদালতের সময় শেষ হলেও সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে তাকে বিদায় দিই।'
এ বিষয়ে আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এবং আইনজীবীদের সহযোগিতার কথা বিনয়ের সঙ্গে উল্লেখ করেন এ বিচারক।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এফআর/পিআর