হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি ছিলেন আশারায়ে মুবাশ্বারা তথা দুনিয়াতে বসেই জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের একজন। তাঁর প্রথম নাম ছিল আবদুল কা`বা। ইসলাম গ্রহণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নাম রাখেন আবদুল্লাহ। উপনাম আবু বকর। বাবার নাম উসমান এবং তাঁর উপনাম ছিল আবু কুহাফা।জন্ম : বিখ্যাত কুরাইশ বংশের তাইম গোত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর দাদা আমজাদ বিন মুররা বিন কা`আব বিন লুয়াই সূত্রে বংশধারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে মিলে যায়। আবরাহা কর্তৃক কা`বা আক্রমনের তিন বছর পর ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন।বন্ধু হওয়ার গৌরব : তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বয়সে দুই বছরের ছোট ছিলেন। তিনি ৫৯০ খ্রিস্টাব্দে ১৮ বছর বয়সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বন্ধু হওয়ার অমূল্য গৌরব অর্জন করেন। তিনি তৎকালীন সময়ে মক্কার নেতৃস্থানীয়দের একজন ছিলেন। ২০ বছর বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে তাঁদের পরস্পর বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়। তাঁদের বন্ধুত্বের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাইতো তিনি ১৮ থেকে ৬১ বছর পর্যন্ত ৪৩টি বছরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াতের স্বাদ ও সৌন্দর্য স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন।ইসলাম গ্রহণ : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুয়্যাত প্রাপ্তির পর পুরুষদের মধ্যে ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। তখন ইসলামে অনুসারীর সংখ্যা হয় তিন জন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, `আবু বকর এমন ব্যক্তি, যে ইসলামের দাওয়াত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোনো রকম যাচাই-বাছাই বা যুক্তি-তর্কের অন্বেষণ না করেই নিশ্চিন্তে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।`সিদ্দিকে আকবার উপাধি : মিরাজের ঘটনাকে বিনাবাক্যে বিশ্বাস করায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত করেন। তাছাড়া তাকে আতিক উপাধিও দিয়েছিলেন। তাঁকে লক্ষ্য করেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আবু বক্বর ‘আতিকুল্লাহ মিনান নার` অর্থা আবু বকর জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত।হিজরত : নবুওয়তের ১৩তম বছর ৮ রবিউল আউয়াল, ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন।যুদ্ধে অংশগ্রহণ : তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে প্রায় সব যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন।খেলাফত গ্রহণ : নির্ভরযোগ্য তথ্যানুযায়ী ১১ হিজরির ২ রবিউল আউয়াল তিনি খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবদান : তাঁর প্রথম অবদান ছিল উম্মতের বিভক্তিতে ঐক্যের ঝাণ্ডা স্থাপন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর তিনি সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যার ফলে- ধর্মত্যাগের নয়া ফেতনা, জাকাত অস্বীকারের ফেতনা, ভণ্ড নবির ফেতনা দমনে তিনি সম্পূর্ণরূপে সফল হয়েছিলেন। ইসলামি ভূখণ্ডের হিফাজত করতে পেরেছিলেন।ব্যবসায়ী আবু বকর : প্রাক ইসলামী যুগ থেকেই তিনি ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। খলিফা হয়েও তিনি ব্যবসায় দেখাশোনা করতেন। ব্যবসার কারণে প্রশাসনিক কাজে অসুবিধা হওয়ার আশংকায় হজরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্য সাহাবিদের পরামর্শে ব্যবসায়ের পরিবর্তে রাষ্ট্রপরিচালনায় বছরে তিনি ৬০০০ দিরহাম ভাতা গ্রহণে রাজি হন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকেও তিনি সহজ সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। উটের চামড়ায় নির্মিত তাঁবুর ঘরে তিনি বসবাস করতেন।রোগাক্রান্ত : তিনি ১৩ হিজরির ৭ জমাদিউল উখরা জ্বরে আক্রান্ত হন। ১৫ দিন রোগাক্রান্ত অবস্থায় কাটান।মৃত্যু : হিজরি ১৩ সনের ২৩ জুমাদাল উখরা মোতাবেক ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দের আগষ্ট মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)দাফন : হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হুজরায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : jagoislam247@gmail.comজাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।এমএমএস/আরআইপি
Advertisement