জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় এ বছর পাসের হার ৮৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা গত বছরে চেয়ে ২ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এছাড়া এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৮ হাজার ৪২৯ জন শিক্ষার্থী। যা গত বছর ছিল ৬৮ হাজার ৯৫ জন। ফলে এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে ১০ হাজার ৩৩৪ জন। অর্থাৎ এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বেড়েছে।
Advertisement
এছাড়া এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই সূচকেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। মেয়েদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। যা গত বছর ছিল যথাক্রমে ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং ৮৫ দশমিক ১২ শতাংশ।
এ বছর জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৬ হাজার ৭৪৭ জন। যা গত বছর ছিল ৬৬ হাজার ১০৮ জন। অর্থাৎ এ বছর জেএসসিতে জিপিএ-৫ বেড়েছে ১০ হাজার ৬৩৯ জন। অন্যদিকে জেডিসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৮২ জন। গত বছর ছিল ১ হাজার ৯৮৭ জন। জেডিসিতে জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ৩০৫ জন।
এবার মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫ হাজার ৮৮৩ জন, যা গত বছর ছিল ৩৯ হাজার ৯০৫ জন। ফলে বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭৮ জন। আর ছাত্রদের মধ্যে জিপিএ-৫ সংখ্যা ৩২ হাজার ৫৪৬ জন, যা গত বছর ছিল ২৮ হাজার ১৯০ জন। অর্থাৎ পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দুই সূচকেই মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
Advertisement
জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। এর আগে সকাল ১০টায় সব বোর্ড চেয়ারম্যানদের নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জেএসসি-জেডিসি ফলাফলের কপি হস্তান্তর করেন তিনি।
এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২২ লাখ ২১ হাজার ৫৯১ শিক্ষার্থী। যা গত বছর ছিল ২২ লাখ ১৬ হাজার ৯৬১ জন। সে তুলনায় পরীক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৬৩০ জন।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৮ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৫১৮ জন। সে হিসাবে এবার পাসের সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ হাজার ২০০ জন। এ বছর সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। এবার পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ।
মাদরাসা বোর্ডের ফলমাদরাসা বোর্ডে এবার ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪৪২ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৩ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বছর ৩ লাখ ৮২ হাজার ২০৮ জন অংশ নিয়ে পাস করেছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩১১ জন। পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। এবার পাসের হার বেড়েছে ০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
Advertisement
ফলে এগিয়ে মেয়েরাএবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় মোট ১৪ লাখ ৬ হাজার ২৫৩ জন ছাত্রী ও ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৮০০ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। অর্থাৎ ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন বেশি ছিল। তাদের মধ্যে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৯ জন ছাত্রী ও ১০ লাখ ৪০ হাজার ৭৪২ জন ছাত্র পাস করেছে। ছাত্রীদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। ছাত্রের তুলনায় ১ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি ছাত্রী পাস করেছে।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও মেয়েরা এগিয়ে। মেয়েরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫ হাজার ৮৮৩ জন। পক্ষান্তরে ছেলেরা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ হাজার ৫৪৬ জন। সে অনুযায়ী ছেলেদের তুলনায় ১৩ হাজার ৩৩৭ জন বেশি মেয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
শতভাগ পাস-ফেল প্রতিষ্ঠানএবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজার ২৪৩টি। যা গত বছর ছিল ৪ হাজার ৭৬৯টি। গত বছরের তুলনায় এবার এ সংখ্যা বেড়েছে ৪৭৪টি। অন্যদিকে, শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৩টি। গত বছর ছিল ৪৩টি। এবার ১০টি শতভাগ শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে।
শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে এবার বরিশালে সর্বোচ্চ ৯৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ১০ শতাংশ, যশোরে ৯১ দশমিক ০৮, সিলেটে ৯২ দশমিক ৭৯, দিনাজপুর ৮৩ দশমিক ৯২, ঢাকায় ৮২ দশমিক ৭২, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৯২, কুমিল্লা বোর্ডে ৮৮ দশমিক ৮ এবং ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ৮৭ দশমিক ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষায় পাসের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উভয়ে অনেক কষ্ট করেন। জিপিএ-৫ পাওয়াটাই প্রধান বিষয় নয়, শিক্ষার্থীরা পাস করছে, তারা ভালো ফল পাচ্ছে সেটিও আমাদের কাছে প্রধান বিষয়। আমরা পরীক্ষা কমিয়ে ক্লাস মূল্যায়ন বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছি। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত জেএসসি পরীক্ষার বদলে ক্লাস মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হবে। এর সঙ্গে ২০২১ সাল থেকে বর্তমান জিপিএ-৫ পদ্ধতি পরিবর্তন করে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
এমএইচএম/এসএইচএস/আরএস/এমকেএইচ