সালতামামি

এসএ গেমসে রেকর্ড সাফল্যের বছর

বিদায়ী বছরের শেষ মাসে নেপালের কাঠমান্ডু ও পোখারায় বসেছিল সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমেসর তেরতম আসর। গেমসটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। হিমালয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা যে এনেছেন ১৯ স্বর্ণসহ ১৪২টি পদক! যা আগের যে কোনো আসরের চেয়ে বেশি। এর আগে ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত একাদশ এসএ গেমসে বাংলাদেশ জিতেছিল ১৮ স্বর্ণসহ ৯৭টি পদক।

Advertisement

এসএ গেমসের এই রেকর্ড সাফল্য দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বছর পার করতে সহায়তা করেছে। কারণ, যে টার্গেট নিয়ে এবারের এসএ গেমসে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ, বাস্তবে ফলাফল হয়েছে তার চেয়ে অনেক ভালো।

এসএ গেমসের এই সাফল্যকে দুইভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। এক. বাংলাদেশ আগের চেয়ে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এই সাফল্য পেয়েছে কি না। দুই. এত স্বর্ণ আসার টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা। তবে যেভাবেই এর ব্যাখ্যা করা হোক- দিনশেষে মনে থাকে সাফল্যটাই।

দক্ষিণ এশিয়ার এই গেমসের একচ্ছত্র রাজত্ব ভারতের। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় দেশটির কাছে এসএ গেমস এখন গুরুত্বহীন। তাদের চোখ এখন আরো ওপরে- এশিয়াড ও অলিম্পিক থেকে পদক আনে তারা। এসএ গেমস তাদের কাছে ডালভাত। তাইতো এবার ফুটবল, ক্রিকেট, আরচারি, কারাতেসহ অনেক ডিসিপ্লিনে দলই পাঠায়নি ভারত।

Advertisement

বাংলাদেশ যে ১৯ স্বর্ণ পদক জিতেছে তার মধ্যে সর্বাধিক ১০টি এসেছে আরচারি থেকে। খেলাটি বাংলাদেশে এখনো অপ্রচলিত। ভারত না থাকায় গেমস আরচারিতে একক রাজত্ব চলে আসে বাংলাদেশের হাতে। আগের এসএ গেমসে ডিসিপ্লিনের সবক’টি স্বর্ণ জেতা ভারত না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই এবার সবগুলো চলে আসে বাংলাদেশের ঝুলিতে। তাইতে প্রাপ্ত স্বর্ণের অর্ধেরও বেশি আসে তীর-ধনুক থেকে।

কারাতে থেকে এসেছে ৩টি স্বর্ণ। দুটি করে ক্রিকেট ও ভারোত্তোলনে। বাকি দুটি এসেছে তায়কোয়ানদো ও ফেন্সিং থেকে। বাংলাদেশের পাওয়া ১৯ স্বর্ণের মধ্যে কেবল ফেন্সিংয়েই লড়াই করতে হয়েছে ভারতের সঙ্গে। নারী ফেন্সার ফাতেমা মুজিবের হাত ধরে দেশের অপ্রচলিত এই খেলা থেকে একটি স্বর্ণ আসে বাংলাদেশের।

১৯ স্বর্ণ পেলেও গেমসের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থার কিন্তু উন্নতি হয়নি। এবারও ৭ দলের মধ্যে হয়ে ফিরেছে পঞ্চম হয়ে। বাংলাদেশের পেছনে থেকে গেমস শেষ করেছে মালদ্বীপ ১ স্বর্ণ ও ভুটান কোনো স্বর্ণ না জিতে।

তাহলে উন্নতি কোথায়? আসলে উন্নতিটা কেবল স্বর্ণের সংখ্যায়। কারণ, যে সব খেলার দিকে দেশের মানুষ তাকিয়ে ছিল তার মধ্যে কেবল ক্রিকেটের ছেলে-মেয়েরাই স্বর্ণ জিতেছে। তাও ভারত-পাকিস্তান না থাকায়। ভারত-পাকিস্তান না থাকার পরও আবার চরম ব্যর্থ হয়েছে ফুটবলে। ব্রোঞ্জ নিয়ে দেশে ফিরেছে জেমি ডে’র দল।

Advertisement

আগের আসরে বাংলাদেশ পেয়েছিল চার স্বর্ণ। যার মধ্যে দুটি এসেছিল সাঁতার থেকে। একটি ছিল শ্যুটিং ও ভারোত্তোলনে। এবার সাঁতার ও শ্যুটিং তাদের স্বর্ণ ধরে রাখতে পারেনি। নারী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত পরপর দুই গেমসে স্বর্ণ জিতে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

অ্যাথলেটিকস, শ্যুটিং, সাঁতার ও ফুটবলের স্বর্ণ না পাওয়া অতৃপ্ত করেই রাখে ক্রীড়ামোদীদের। কারণ, মানুষ এ খেলাগুলোর খোঁজ-খবরই রাখে; কিন্তু আগ্রহের শীর্ষে থাকা খেলাগুলোই হতাশ করেছে ক্রীড়ামোদীদের।

কারাতে, তায়কোয়ানদো ও ভারোত্তোলনে আগেও এসএ গেমসে স্বর্ণ ছিল বাংলাদেশের; কিন্তু আরচারি ও ফেন্সিংয়ে এবারই প্রথম। ১৯ স্বর্ণ জয়ে ক্রীড়া প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলো উচ্ছ্বাস করলেও অতৃপ্তির জায়গা থেকে যাওয়ায় ব্যর্থ ফেডারেশনগুলোকে জবাবদিহীতার আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। কেন সাফল্য আসছে না- সরকারকে এই ব্যাখ্যা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলোকে।

ক্রিকেট ছাড়া দলগত আর কোনো ডিসিপ্লিনে স্বর্ণ আসেনি। ২৫ ডিসিপ্লিনের মধ্যে পদকশূন্যও আছে পাঁচটি। ভলিবল, বাস্কেটবল, সাইক্লিং, স্কোয়াশ ও টেনিস ফেডারেশন শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে এবারের এসএ গেমসে। কাবাডি-হ্যান্ডবল বিশাল বহর পাঠিয়েও ব্রোঞ্জের বেশি আনতে পারেনি।

পাওয়া ও না পাওয়ার হিসেব হয়তো মিলবে না। ব্যর্থতার জবাবও পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। তবে এটা ঠিক, এসএ গেমসের কারণেই বিদায়ী ২০১৯ সালটা স্বরণীয় হয়েই থাকবে দেশে ক্রীড়াঙ্গনে। রেকর্ড এই স্বর্ণ যে এসেছে দেশের বাইরে থেকেই।

এসএ গেমসের বাইরেও আছে আরচারিতে আরেকটি সাফল্য। এ বছরই যে আরচার রোমান সানা অলিম্পিক গেমসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জুনে নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠে আগামী বছর টোকিও অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন রোমান। সেখানে ব্রোঞ্জ পদকও জিতেছেন দেশসেরা এই আরচার।

রোমান সানা হলেন দেশের দ্বিতীয় ক্রীড়াবিদ যিনি যোগ্যতার মাধ্যমে অলিম্পিকে খেলবেন। এর আগে গত রিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলেছিলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান।

আরআই/আইএইচএস/জেআইএম