বিষয়টা সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক গতিতারকা শোয়েব আখতার। জানিয়েছেন, স্রেফ হিন্দু হওয়ার কারণে লেগস্পিনার দানিশ কানেরিয়ার প্রতি নেতিবাচক আচরণ করতেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। এমনকি একসঙ্গে বসে খেতে পর্যন্ত চাইতেন না দলের অনেক খেলোয়াড়।
Advertisement
এ প্রসঙ্গে শোয়েব আখতারের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন কানেরিয়া নিজেও। এমনকি সেসব ক্রিকেটারদের নাম প্রকাশ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছেন জাতীয় টেলিভিশনে। শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণে যেসব আচরণের সম্মুখীন হয়েছিলেন কানেরিয়া, সে ব্যাপারে কথা বলার সাহস এখন তিনি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
তবে একই প্রসঙ্গে আবার শোয়েব ও কানেরিয়ার মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও তৎকালীন কোচ জাভেদ মিঁয়াদাদ। তার দাবী পাকিস্তান দলে কখনো ধর্ম নিয়ে উগ্রতা ছিলো না। টাকার লোভে এখন যা খুশি বলে যাচ্ছেন কানেরিয়া।
পাকিস্তানি টিভি চ্যানেলে একটি অনুষ্ঠানে শোয়েব বলেছিলেন, ‘আমার পুরো ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার করাচি, পাঞ্জাব ও পেশওয়ার ইস্যুতে মানুষের সঙ্গে তর্ক করতে হয়েছে। দানিশ কানেরিয়ার মতো হিন্দু ক্রিকেটারদের তারা জিজ্ঞেস করতো, তুমি এখানে আমাদের সঙ্গে খাচ্ছো কেনো? এসবের বিপরীতে আমি তাদের বলতাম যে, তোমাদের কেমন লাগবে যদি আমি তোমাদের খাবার ছিনিয়ে নিয়ে বলি বাইরে গিয়ে খাও?’
Advertisement
শোয়েবের এমন সাহসী মন্তব্যের পর কানেরিয়াও মুখ খোলার সাহস পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘কিছু খেলোয়াড় আমার সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করতো না। কারণ আমি হিন্দু ছিলাম। খুব শীঘ্রই আমি তাদের নাম প্রকাশ করবো। এ বিষয়ে কথা বলার সাহস ছিলো না আমার। শোয়েব ভাইর মন্তব্যের পর আমিও সাহস পেয়েছি।’
কানেরিয়া ও শোয়েবের এমন সব মন্তব্য যখন তোলপাড় শুরু হয়ে যায় পাকিস্তান ক্রিকেটে, তখন মুখ খোলেন মিঁয়াদাদ। সাফ জানিয়ে দেন তার দলে কখনোই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বা নেতিবাচকতা ছিলো না। ফিক্সিংয়ের দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ থাকায় এখন টাকার লোভে যা তা বলছেন কানেরিয়া- এমনটাই মনে করেন মিঁয়াদাদ।
তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না তারা (শোয়েব ও কানেরিয়া) কী প্রমাণ করতে চাইছে। তবে আপনি যদি কানেরিয়ার কথা বলেন, তাহলে আমি বলবো যে যেহেতু তার ক্রিকেটে আর কিছুই দেয়ার নেই, তাই টাকার জন্য সে যেকোনো কিছুই বলতে পারবে।’
এসময় কানেরিয়ার নিষেধাজ্ঞার দিকে আলোকপাত করে মিঁয়াদাদ আরও বলেন, ‘আপনারা এমন কাউকে কীভাবে বিশ্বাস করছেন, যে কি না দুর্নীতির দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ রয়েছে এবং এরই মধ্যে নিজ দেশের নাম খারাপ করেছে। ২০০০ সালের দিকে আমি দলের হেড কোচ ছিলাম, তখন কানেরিয়াও দলে ছিলো। কিন্তু আমার এমন একটি ঘটনাও মনে পড়ে না যেখানে হিন্দু হওয়ার কারণে কানেরিয়ার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।’
Advertisement
মিঁয়াদাদ মনে করিয়ে দেন, সে সময় কানেরিয়ার সমসাময়িক লেগস্পিনার ছিলেন ইমরান তাহির, আলি হুসেইন রিজভী বা মনসুর আমজাদারা। ধর্ম নিয়ে সমস্যা হলে কানেরিয়ার বদলে এদের কাউকেই দলে নিতো পাকিস্তান। নিশ্চয়ই ১০ বছর খেলতে পারতো না পাকিস্তানের হয়ে।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘দানিশ কানেরিয়াকে পাকিস্তান অনেক সম্মান দিয়েছে। প্রায় দশ বছরের মতো সে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছে। ধর্ম নিয়ে যদি সমস্যা থাকতো, তাহলে এটা সম্ভব হতো? পাকিস্তান ক্রিকেটে কখনোই ধর্ম নিয়ে কোনো পক্ষপাতিত্ব ছিলো না।’
এসএএস/এমএস