খেলাধুলা

উইকেট শিকারে সবার ওপরে পেসার মেহেদি হাসান রানা

ব্যাট হাতে বিদেশিদের দাপট, প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরানো এবং ম্যাচ ভাগ্য গড়ে দেয়া নতুন নয়। বিপিএলের ইতিহাস-পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে, দুই একবার ছাড়া বেশিরভাগ আসরের টপ স্কোরারই বিদেশি।

Advertisement

তাই বাংলাদেশের তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, সাব্বির রহমান রুম্মন, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েসদের পেছনে ফেলে রাইলি রুশো ও ডেডিড মালানদের রান তোলায় সবার ওপরে জায়গা করে নেয়া বিস্ময়কর নয়। সেটা হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে বোলিংয়ে বাংলাদেশের এক নবীন পেসার ঢাকা ও চট্টগ্রামে হওয়া প্রথম দুইপর্ব শেষে সর্বাধিক উইকেটশিকারি! সেটাও মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির, আন্দ্রে রাসেলদের টপকে?

এ যে ভাবনারও অতীত! নিশ্চিত করে বলা যায়, কারো মাথায়ই ওমন চিন্তায় আসেনি। কিন্তু আসল সত্য হলো, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের তরুণ পেসার মেহেদি হাসান রানা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বাধিক উইকেটশিকারি।

সব হিসেব নিকেশ পাল্টে সবাইকে অবাক করে চাঁদপুরের ২২ বছরের পেসার মেহেদি হাসান রানা এখন উইকেটশিকারি তালিকায় সবার ওপরে। সব সম্ভবের খেলা ক্রিকেট আসলে এমনই। কখন কি ঘটে আর কে কোথায় দিয়ে কি করে ফেলেন, তা আগে থেকে ভাবা কঠিন।

Advertisement

মেহেদি হাসান রানার এবারের উত্থানটা ঠিক ওমন। কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন, এটা বুঝি তার প্রথম বিপিএল। মোটেই তা নয়। মেহেদি হাসান রানার এটা তৃতীয় বিপিএল। অভিষেক হয়েছে ২০১৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ান্সের হয়ে।

বিপিএলে প্রথম ম্যাচ ২০১৭ সালের এই ডিসেম্বর মাসে (৫ ডিসেম্বর) ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে। সে ম্যাচে পুরো ৪ ওভার বোলিং করেও ৩৬ রান দিয়ে উইকেটের দেখা পাননি এ বাঁহাতি পেসার। পরের বার মানে ২০১৮ সালে রানার দল ছিল সিলেট সিক্সার্স। সেখানেও কিছু করতে পারেননি। কিন্তু এবার তৃতীয়বারে বাজিমাত। দেশ ও বিদেশের অনেক নামি দামি বোলারকে পিছনে ফেলে সবার ওপরে এখন রানা।

৫ ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১৩ উইকেট দখল করেছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এই পেসার। মেহেদি হাসান রানার এখন পর্যন্ত সেরা বোলিং ৪/২৩। ৪ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন ২ বার। ওভার পিছু রান দিয়েছেন ৬.৪৭ করে। সব মিলে বেশ আশা জাগানো পারফরম্যান্স।

এবারের বিপিএলে মেহেদি হাসান রানার সাথে দেশের আরও কজন পেসার অবশ্য উইকেট শিকারে ওপরের দিকে আছেন। সেই দলে রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, আল আমিন হোসেন ও তরুণ ইবাদত হোসেনা জায়গা করে নিলেও তারা বেশ পেছনে।

Advertisement

এখন দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেটশিকারি ক্যারিবীয় পেসার আন্দ্রে রাসেল (রাজশাহী রয়্যালস)। ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট। সেরা বোলিং ৪/৩৭। আর তৃতীয় স্থানে আছেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান (৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৮ উইকেট। সেরা বোলিং ২/২২)।

অনেক প্রতিষ্ঠিত বোলারকে পেছনে ফেলে উইকেট প্রাপ্তিতে চার নম্বর কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের সৌম্য সরকার (৬ ম্যাচে ৮ উইকেট। সেরা বোলিং ২/১২)। ব্যাট হাতে কেন যেন নিজের মানে পৌঁছুতে পারছেন না। নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। তবে দিনকে দিন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বোলার সৌম্যকে উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। এবারের বিপিএলেও মিলেছে তার প্রমাণ।

পঞ্চম সর্বাধিক উইকেটশিকারি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পেসার রুবেল হোসেন (৬ ম্যাচে ৮ উইকেট। সেরা ২/২৭)। ষষ্ঠ সেরা ইংলিশ অলরাউন্ডার রবি বোপারা রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৭ উইকেট। সেরা ২/১০।

সপ্তম স্থানে আছেন সিলেট থান্ডার্সের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিসমার সান্তোকি (৬ ম্যাচে ৭ উইকেট। সেরা ৩/১৩)। আট নম্বরে বাংলাদেশের আরেক পেসার মোহাম্মদ আল আমিন। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলা আল আমিন এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৭ উইকেট দখল করেছেন। সেরা বোলিং ৩/১৪।

নবম স্থানটি রংপুরের লুইস গ্রেগরির (৫ ম্যাচে ৬ উইকেট)। আর যাকে ভাবা হয় বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে এক নম্বর, সেই কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের অবস্থান গিয়ে ঠেকেছে দশ নম্বরে। রংপুরের হয়ে খেলা এ বাঁহাতি পেসারের নামে পাশে জমা পড়েছে ৬ উইকেট (৫ ম্যাচে, সেরা বোলিং ফিগার ২/২৩)।

১১ ও ১২ নম্বরেও দুই বাংলাদেশি তরুণ পেসার -ইবাদত হোসেন (সিলেট থান্ডার্সের হয়ে ৬ ম্যাচে ৬ উইকেট। সেরা ২/১৭) আর শহিদুল ইসলাম (খুলনা টাইগার্সের হয়ে ৫ ম্যাচে ৬ উইকেট। সেরা ২/৩২)।

অভিজ্ঞ মাশরাফি বিন মর্তুজা তেমন উইকেট না পেলেও আলগা বোলিং করেছেন কম। ৬ ম্যাচে মোট ১৮ ওভার বোলিং করা নড়াইল এক্সপ্রেসের নামের পাশে জমা পড়েছে ৩ উইকেট।

এআরবি/এমএমআর/পিআর