চারদিকে ঘন কুয়াশা, কনকনে শীতে ভর করেছে স্থবিরতা। তবুও জীবন বহমান। জীবিকার তাগিদে ছুটে চলেছেন সবাই। সেই ছুটে চলায় শীতকালে উপভোগের উপলক্ষ হয়ে আসে নানারকম গানের অনুষ্ঠান। বিশেষ করে দেশের জনপ্রিয় সব ব্যান্ডদলগুলোর অংশগ্রহণে কনসার্ট শ্রোতাদের মাতিয়ে তুলে গানের উৎসবে।
Advertisement
মঙ্গলবার শীতের সন্ধ্যায় বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের রাজদর্শন হলে শ্রোতানন্দিত ব্যান্ডদল মাইলস তেমনই এক উৎসব উপহার দিলো। দলটির চার দশক উদযাপন উপলক্ষে হয়ে গেল এক জমজমাট কনসার্ট। নতুন পুরনো গানে গানে চার দশকের মাইলসকে নতুনভাবে চিনল ভক্তরা। এখানে মাইলসকে ভালোবাসা জানাতে গান নিয়ে আরও হাজির ছিলো ফিডব্যাক, ওয়ারফেজ, দলছুট, ভাইকিংসের মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলো।
শ্রোতা-দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ রাজদর্শন হলে প্রথমেই গান শুরু করে ব্যান্ডদল ভাইকিং। তারা মাইলসকে উৎসর্গ করে গেয়ে শোনায় ‘শান্তি চাই’ গানটি।
গান শেষেই মঞ্চে আসেন মাইলসের জনপ্রিয় গানের গীতিকারেরা। তারা শোনান মাইলসের গান লেখা ও তৈরির পেছনের নানা কথা। ফাঁকে ফাঁকে ফাকে ভক্তরাও মাইলসের গানের সঙ্গে তাদের জীবনের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলে উঠেন।
Advertisement
ভাইকিংসের পরই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আজরা মাহমুদ মঞ্চে ডেকে নেন ব্যান্ডদল ‘ওয়ারফেজ’-কে। মাইলসকে ট্রিবিউট করে তারা গেয়ে শোনায় ‘শেষ ঠিকানা’ গানটি। এরপর মঞ্চে আসে ব্যান্ড সোলস। মাইলসের গুঞ্জন শুনি গেয়ে শোনান সোলসের নাসিম আলী। দলছুটের বাপ্পা মজুমদার মঞ্চে এসে কণ্ঠে তুলেন মাইলসের ' জাদু' গানটি। পরে ফিডব্যাক মঞ্চে উঠে গেয়ে শোনান মাইলসের 'ভালাবাসো যারে' গানটি।
এরপরই প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে আসে মূল আকর্ষণ মাইলস। চিরচেনা ভঙ্গিতে দলপ্রধান হামিন আহমেদ বলে উঠেন 'ইটস মাইলস টাইম'। এরপরই শাফিন আহমেদ গেয়ে উঠেন 'পাহাড়ি মেয়ে'। এরপর হামিন আহমেদ কণ্ঠে তোলেন 'সুপ্ত বাসনা'। একে একে প্রিয়তমা, কি জাদু, চাদতারা গানগুলো গেয়ে শোনায় দলটি।
এরপর মঞ্চে উঠেন তিনজন মাইলসভক্ত। যারা মাইলসের 'নীলা' গানের কন্টেস্টে সেরা বিজয়ী হয়েছেন। মাইলসের সাথে মঞ্চে নীলা গানটি গেয়ে শোনান তারা। দর্শক অনুরোধে পরে এই গানটি আবার গেয়ে শোনান হামিন আহমেল। এরপর একাধিক গানের কোলাস গাওয়া হয়। শোনান পিয়াসি মনসহ জনপ্রিয় সব গান।
মাইলসের চার দশকের এই উদযাপন শুরু হয়েছে গত ২১ জুন। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা করে গানের দল মাইলস। উদ্দেশ্য দলটির ৪০ বছর উদযাপনের কনসার্টে অংশ নেওয়া। একে একে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ২৭টি কনসার্ট করে তারা। প্রতিটি কনসার্টে মাইলসের সঙ্গে গলা ছেড়ে গান করেন প্রবাসী বাঙালি শ্রোতারা। ঢাকায় বিশাল এক কনসার্টের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এই আনন্দ উৎসব।
Advertisement
১৯৭৯ সালে যাত্রা শুরু করে মাইলস। ফরিদ রশিদের হাত ধরে মাইলসের পথচলা শুরু হয়। তিনিই ছিলেন মাইলসের প্রতিষ্ঠাতা। অনুষ্ঠানের গানের মাঝে মাঝে কথায় ঠিক এমনটাই জানান মাইলসের ভোকাল ও গিটারিস্ট হামিন আহমেদ। তিনি জানান, নিজেদের আত্মপ্রকাশের আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গান গাইত মাইলস। তাদের সঙ্গে একরকম পেশাদার ব্যান্ড হিসেবেই চুক্তি করেছিল হোটেলটি। সপ্তাহে পাঁচদিন তারা সেখানে গান করতেন।
বর্তমানে মাইলসের সদস্য পাঁচজন। তারা হলেন শাফিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, মানাম আহমেদ, সৈয়দ জিয়াউর রহমান তূর্য ও ইকবাল আসিফ জুয়েল। তাদের মধ্যে শাফিন, হামিন, মানাম শুরু থেকেই দলের সঙ্গে আছেন।
মঙ্গলবারের কনসার্টটি আয়োজন করেছে উইন্ডমিল।
এলএ/এমআরএম