প্রবাস

সিঙ্গাপুরে অভিবাসী সাহিত্য উৎসব

সিঙ্গাপুরের জাতীয় গ্রন্থাগারের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে অভিবাসী সাহিত্য উৎসব। ২২ ডিসেম্বর দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করে সিঙ্গাপুরের অভিবাসী সাহিত্যিকদের সংগঠন মাইগ্র্যান্ট রাইটার্স অব সিঙ্গাপুর।

Advertisement

বইমেলা, মোড়ক উন্মোচন, অভিবাসী সাহিত্যের ভবিষ্যত বিষয়ক আলোচনা, ওপেন বর্ডার, কার্নিভাল অব পোয়েট্রি, মানবিক পাঠাগার, জেব্রাক্রশিং-এর আবৃত্তি উপস্থাপনায় মুখরিত ছিল অনুষ্ঠান।

বইমেলার তত্ত্বাবধানে ছিলেন বেলাল হাসান। বইমেলায় বাংলা বইয়ের পাশাপাশি বাহাসা, তাগালগ, তামিল, মালয় এবং ইলিশ ভাষার বই ছিল। বেস্ট সেলার হিসেবে ১ম হয় বাংলাদেশি অভিবাসী লেখক ওমর ফারুকী শিপনের মাইগ্যান্ট লাইফ, স্টোরিস অব রিভারিস্ট বইটি।

আয়োজক সংগঠনের জাকির হোসেন খোকনের স্বাগত বক্তব্যে উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান এবং সিঙ্গাপুর জাতীয় গ্রন্থাগার ও সিঙ্গাপুর লিটারেরি স্টেশনকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।

Advertisement

অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বোয়ে কিম চেঙ। তিনি বলেন, আমি আজ আনন্দিত অভিবাসীদের সাহিত্য উৎসবে অতিথি হিসেবে আসতে পেরে। আশা করি অভিবাসীরা তাদের সাহিত্য কর্ম দিয়ে সিঙ্গাপুরকে আরো সমৃদ্ধ করবে। আয়োজকদের আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

অভিবাসীদের প্রকাশিত ৪টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন লেখক আলফিয়ান সাদ। বাংলাদেশি লেখক ওমর ফারুকী শিপনের Migrate Life, মনির আহমদ সম্পাদিত শরীয়তপুরের সাময়িকী পথ, ফিলিপিনের কবি শাই এস্পোসোর কবিতাগ্রন্থ Dream is my reality ও অভিবাসীদের যৌথভাবে সম্পাদিত একটি রান্না বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মোড়ক উন্মোচনের আগে অতিথি আলফিয়ান সাদ বলেন, আমি জানি একটি বই প্রকাশ করতে একজন লেখকের কতটা শ্রম মেধা খরচ করতে হয়। একটি বই লেখকের জন্য সন্তান স্বরূপ। আমি লেখকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।

অভিবাসীদের সাহিত্যের ভবিষ্যত ও করণীয় শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অভিবাসী কবিতা প্রতিযোগিতার বিজয়ী কবি বিকাশ নাথ, রানার্সআপ ইউলিয়া, অভিবাসী কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজক শিভাজি দাস ও বুক একচুয়াল্লী প্রকাশনীর কর্ণধার কেন্নি ল্যাক।

Advertisement

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সিঙ্গাপুরের লেখক ও সম্পাদক তিউপিলাস কিউক। এ সময় আলোচকরা বলেন, সিঙ্গাপুরে সাহিত্য পুরস্কার এবং গোল্ডেন পয়েন্ট পুরস্কারের মাধ্যমে অভিবাসী লেখকদের সম্মানিত করে তাদের সাহিত্যকর্মকে স্বাগত জানালে অভিবাসীরা লেখালেখির প্রতি আরো উৎসাহিত হবে।

ইন্দোনেশিয়ার লেখক এলি নূর ফাদিলাহর সঞ্চালনায় ওপেন বর্ডার পর্বে অভিবাসীদের জীবন ও অন্যান্য নিয়ে গল্প বলেন ৬ জন গল্পকথক।কবি ও ফটোগ্রাফার উইন্ডু লাসতারীর সঞ্চালনায় কার্নিভাল অফ পোয়েট্রি পর্বে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন ৫ জন অভিবাসী কবি।

বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অভিবাসীদের জীবনের গল্প জানা বিষয়ক পর্ব মানবিক পাঠাগারে পাঠ হয় ৬ জন অভিবাসীর জীবনবৃত্তান্ত। আবৃত্তি ব্যান্ড জেব্রাক্রশিং তাদের সিগনেচার প্রজেকশন জেব্রাক্রশিং পর্বটি উপস্থাপন করেন।

লেখালেখির কর্মশালার উপর আলোচনা করেন লেখক রাহুল শাহ। আলোচনায় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ব্যাখা করেন ও সদ্ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি উপস্থিত দর্শকদের লেখালেখির সহজ কৌশল বর্ণনা করেন।

বইমেলায় বই বিক্রির পাশাপাশি অভিবাসীদের বইয়ের প্রদর্শনী এবং ওয়ান ব্যাগ ওয়ান বুক টিমের পক্ষ থেকে বই এক্সেঞ্জ-এর বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। দুই শতাধিক সাহিত্যপ্রেমীর উপস্থিতিতে মুখরিত এই অনুষ্ঠান আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্রেইট টাইমসসহ বেশকিছু সাংবাদিক।

অভিবাসী বেলাল হাসান, ইলি নুর ফাদিল্লাহর পাশাপাশি অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট জয় ওং ও মিশেল।

অনুষ্ঠান শেষে আয়োজক কমিটির প্রধান জাকির হোসেন খোকন বলেন, পরিবার পরিজন ছেড়ে একাকী প্রবাসে থাকার কারণে অভিবাসীরা বেশিরভাগ সময় একাকীত্ব ও হোমসিকনেসে ভোগেন। তাই আমরা সাহিত্য উৎসবের মাধ্যমে অভিবাসীদের সাহিত্য কর্মের মূল্যায়ন করার ক্ষুদ্র প্রয়াস করেছি মাত্র। আশাকরি এ ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয়দের সাথে অভিবাসীদের যোগসূত্র তৈরি হবে তারা সাহিত্য কর্মে উৎসাহিত হবে।

সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় গ্রন্থাগারের কর্মকর্তা রেশমা বলেন, অভিবাসীদের এমন সুন্দর সাহিত্য উৎসব আয়োজনে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আশা করি ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজনে আমরা সবসময় আয়োজকদের পাশে থাকব।

এমআরএম