>> বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে ১৬১৭টি প্রকল্প>> এতে খরচ হচ্ছে দুই লাখ ১৫ হাজার ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা>> ময়মনসিংহ বিভাগে বাস্তবায়ন হচ্ছে মোট ৬৩টি প্রকল্প>> এ বিভাগে খরচ হচ্ছে তিন হাজার ৫৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা>> ৩ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য, ৩৮টি ধীরগতির, ২২টি ভালো
Advertisement
জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণের (ব্রহ্মপুত্র এপ্রোচসহ) কাজ চলছে ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ এখন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় অর্ধেকেরও কম, ৪৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
সময় শেষ হয়ে এলেও প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ অর্ধেকের বেশি রয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, প্রকল্পটির অগ্রগতি ‘ধীর’।
অগ্রগতি ‘ধীর’ কেন- জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. সাইফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ভূমি পাচ্ছি না, এ কারণে ধীরগতি। ভূমি অধিগ্রহণ করে দেয় জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে। তারা ভূমি অধিগ্রহণ করে দিতে দেরি করছে। ভূমি পেয়ে গেলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’
Advertisement
আইএমইডি সূত্র এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগে বর্তমানে ৬৩টি একক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে ১২টি প্রকল্পই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ভুগছে।
ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া, ঠিকাদারদের ঢিলেমি, মান বজায় রেখে কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না নিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া, সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় বারবার সময় বৃদ্ধি, যথাযথভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করায় চলমান কাজের মাঝে নতুন সংযোজনের প্রস্তাবসহ নানা ধরনের অসঙ্গতির কারণে ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মান বজায় রেখে কাজ হচ্ছে কি-না, ঠিকাদাররা কাজ করছে কি-না, যথাযথ পরিকল্পনায় কাজ এগোচ্ছে কি-না, এসব তদারকির ঘাটতিও রয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পে।
একদিকে উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, অন্যদিকে ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন বরাদ্দেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আইএমইডির তথ্য মতে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক হাজার ৬১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে খরচ হচ্ছে দুই লাখ ১৫ হাজার ১১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। খরচ হচ্ছে তিন হাজার ৫৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
Advertisement
গত ২০ নভেম্বর ময়মনসিংহে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ময়মনসিংহ বিভাগের সব প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ ও জামালপুর– এ দুই জেলায় আমি গিয়েছিলাম। প্রকল্পের কাগজ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পেয়ে যাব। মৌখিকভাবে জেনেছি যে, ভালো, আগের তুলনায়। প্রকল্প পরিচালকদের অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া খুবই ভালো। তাদের মধ্যে একটা সংশয় ছিল, নজরদারি, তদারকি করছি।’
‘আমি বারবার বলেছি, আমাদের ওই ধরনের কোনো ইচ্ছা নেই। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। তাদের সমস্যাগুলো বলতে বলেছি, আমরা সেগুলো মোকাবিলা করব।’
আইএমইডির তথ্য মতে, ময়মনসিংহ বিভাগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এককভাবে শিল্প ও শক্তি খাতে কোনো প্রকল্প নেই। তবে পরিবহন খাতে ১৮টি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১০টি, কৃষি ও পানি সম্পদে ১০টি, স্বাস্থ্য ও গৃহায়নে চারটি, শিক্ষা ও সামাজিক খাতে নয়টি, নিবিড় পরিবীক্ষণ ও গবেষণায় নয়টি এবং মূল্যায়ন খাতে সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য, ৩৮টি ধীরগতির এবং ২২টি প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো।
ময়মনসিংহ বিভাগের প্রকল্পে যত জটিলতা
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প পর্যবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইএমইডি। সম্প্রতি তারা ময়মনসিংহ বিভাগের প্রকল্পগুলোর ওপর পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করেছে। নিচের ভূমি অধিগ্রহণ অংশে একসঙ্গে এবং বাকিগুলোর ক্ষেত্রে প্রকল্পের পাশে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হলো।
ধুঁকছে ভূমি অধিগ্রহণ
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা সমাধানের বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীর তথ্যসহ আইএমইডির পর্যবেক্ষণ বলছে, কিছু প্রকল্প পরিচালককে ভূমি অধিগ্রহণ দ্রুত করার জন্য জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। কোনো প্রকল্প পরিচালককে পরিশোধিত নির্দিষ্ট অর্থের বিপরীতে অতি দ্রুত ভূমি দখলে নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ দ্রুত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে এবং অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
গত বছর ময়মনসিংহের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী
প্রকল্পগুলোর মধ্যে শূন্য অগ্রগতির ‘নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা (বাগড়া)-কুনিয়া-মেদনী-রাজুর বাজার সংযোগ মহাসড়ক নির্মাণ’, ধীর অগ্রগতির প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নেত্রকোনা-বিশিউড়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক (জেড-৩৭১০) উন্নয়ন’, ‘জামালপুর-ধানুয়াকামালপুর-কদমতলা (রৌমারী)-জেলা মহাসড়ক (কামালপুর স্থলবন্দর লিংকসহ) প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ’, ‘জামালপুর-কালিবাড়ী-সরিষাবাড়ী সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ’, ‘জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ (ব্রহ্মপুত্র এপ্রোচসহ) এবং ‘গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন‘, ‘ধানুয়াকামালপুর স্থলবন্দর উন্নয়ন’। ভালো অগ্রগতির প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-বিরিশিরি-দুর্গাপুর জেলা মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নয়ন’, ‘জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ (তৃতীয় সংশোধনী)’, ‘জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ’ ‘জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ’ এবং ‘নেত্রকোনা (ঠাকুরাকোনা)-কলমাকান্দা জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন‘ প্রকল্প।
ভারতীয় ঠিকাদারের ‘বাড়তি দর’ আবদার
কাজে ঢিলেমিসহ ঠিকাদারদের সঙ্গে নানা অসঙ্গতির কারণে প্রকল্পে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে ধীরগতির ‘জামালপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জামালপুর নার্সিং কলেজ স্থাপন (প্রথম সংশোধন প্রক্রিয়াধীন)’ প্রকল্পের বিষয়ে আইএমইডির পর্যবেক্ষণ হলো, ভারতীয় ঠিকাদারের কাছ থেকে যে দর পাওয়া গেছে, তা গণপূর্তের ২০১৪ সালের রেট অনুসারে প্রাক্কলন অপেক্ষা বেশি; ‘এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪) প্রশস্তকরণ’ প্রকল্পে ডব্লিউপি-৩, ডব্লিউপি-৪ প্যাকেজে নিয়োজিত ঠিকাদারের জনবল বৃদ্ধি করতে হবে এবং ভালো অগ্রগতির ‘শেরপুর (আখেরবাজার)-লঙ্গরপাড়া-শ্রীবর্দী (মামদামারী) সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ’ প্রকল্পে নির্ধারিত মেয়াদে সমাপ্তির লক্ষ্যে ঠিকাদারের মোবিলাইজেশন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
কাজের মান নিয়ে সন্দেহ
‘জামালপুর জেলার তিনটি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিকরণ’ প্রকল্পের বিষয়ে আইএমইডির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, নির্মাণকাজের মান বজায় রাখার জন্য যথাযথ তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।
কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি
আইএমইডি কিছু প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা ঘাটতি থাকায় তা তৈরি করে এগিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছে। এর মধ্যে ধীরগতির ‘জামালপুর জেলার আটটি পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী সকল অঙ্গের কাজ নির্ধারিত সময়ে সমাপ্তির জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে, তা বাস্তবায়ন; ‘নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে সমাপ্তির জন্য প্রধান প্রধান কার্যক্রমের শুরু ও সমাপ্তসহ ‘টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্লান’ প্রণয়ন করে তা ‘গ্যান্ট চার্ট’-এ প্রদর্শন করে আবশ্যিকভাবে অনুসরণ; ‘শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট মাদারগঞ্জ, জামালপুর স্থাপন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন অগ্রগতি বৃদ্ধির পাশাপাশি তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা এবং ‘ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমের শুরু ও সমাপ্তসহ ‘টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্লান’ প্রণয়ন করে তা ‘গ্যান্ট চার্ট’-এ প্রদর্শন করে আবশ্যিকভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আইএমইডির পর্যবেক্ষণে।
সময়-সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্প
আইএমইডির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সময়-সংক্রান্ত জটিলতায়ও ভুগছে ময়মনসিংহ বিভাগের প্রকল্পগুলো। এর মধ্যে ধীরগতির ‘জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলাধীন যমুনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে ভূয়াপুর-তারাকান্দি সড়ক রক্ষা’ প্রকল্পের কাজ ‘অর্পিত কাজ’ হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করতে বিলম্ব হয়। ‘জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় অবস্থিত কুলকান্দি ও গুঠাইল হার্ডপয়েন্টের মধ্যবর্তী বেলগাছা এলাকাটি যমুনা নদীর ভাঙন হতে রক্ষা’ প্রকল্পের কাজ ‘অর্পিত কাজ’ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় আট মাস সময় লাগে। ‘খেলোয়াড়দের জন্য একটি আধুনিক ইনডোর স্টেডিয়াম (মাল্টি জিমসহ) নির্মাণ’ প্রকল্প পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ‘ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ’ প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর করে দুবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। ‘নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় শৈলজারঞ্জন সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য পরিবর্তন করে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন অনুমোদিত হয়।
আর ভালো অগ্রগতির প্রকল্পের মধ্যে ‘জামালপুর ও মাদারগঞ্জ পৌরসভার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত)’ কাজের গতি না বাড়লে ডিসেম্বর, ২০১৯-এ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না।
তদারকির ঘাটতি
আইএমইডির পর্যবেক্ষণে প্রকল্পগুলোর তদারকি ঘাটতির কথাও বলা হচ্ছে। এর মধ্যে ধীর অগ্রগতির ‘নেত্রকোনা জেলাধীন মোহনগঞ্জ ও আটপাড়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্নের জন্য যথাযথ তদারকি প্রয়োজন, ‘নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলাধীন হাইজদা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে খনন করা শিয়ালজানী খালের পাশে পৌরসভার নিষ্কাশন নালা তৈরিজনিত কারণে খালের ঢালসহ ব্লক অপসারণ করা হয়েছে, তা পুনঃস্থাপন নিশ্চিত রাখা। আর ভালো অগ্রগতির প্রকল্পের মধ্যে ‘নকলা বাইপাস জেলা মহাসড়কের যথাযথ মান, প্রশস্ততকরণ ও মজবুতিকরণ’ জুন, ২০২০ এর মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্যে সওজ অধিদফতরের তদারকি বৃদ্ধি করা এবং ‘সাংস্কৃতিককেন্দ্র উন্নয়ন’ প্রকল্পে স্কিম/ওয়ার্ক প্যাকেজের অগ্রগতি শ্লথ, সেগুলোর মাঠপর্যায়ে নিয়মিতভাবে মনিটরিং করতে হবে।
চলমান প্রকল্পে নতুন প্রস্তাব
আইএমইডির পর্যবেক্ষণে প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় নতুন কিছু প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া কাজের গতি বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়ার প্রতিও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ধীর অগ্রগতির ‘সীমান্ত সড়ক নির্মাণ : ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা অংশ’ প্রকল্পে নির্মাণাধীন সড়কের অষ্টম, ২১তম, ৩৫তম ও ৫০তম কিলোমিটার-এ অতিরিক্ত চারটি বড় সেতু নির্মাণ করা না হলে সীমান্ত সড়কটির নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার সম্ভব হবে না। ‘জামালপুর ও শেরপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সকল চলমান কাজের পূর্ণাঙ্গ তথ্য-সম্বলিত সাইনবোর্ড দৃশ্যমান জায়গায় স্থাপন করতে হবে এবং নির্মাণকাজের এলাকায় সাইট বই সংরক্ষণ করতে হবে। ‘শেখ হাসিনা বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেলান্দহ, জামালপুর স্থাপন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পে বহিরাগত অতিথিদের অবস্থানের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা প্রয়োজন। ‘জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলায় যমুনা নদীর বাম তীর রক্ষাকল্পে হারগিলা নামক স্থানে ক্রসড্যাম নির্মাণ’ প্রকল্পের ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষেত্রে টাস্কফোর্সের নির্দেশনা পরিপালন এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলন করা বালি/মাটি নির্ধারিত স্থানে ডাম্পিং করতে হবে। ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (ময়মনসিংহ জোন)’ প্রকল্পটি নতুন এডিপিভুক্ত প্রকল্প। অনুমোদিত মেয়াদে প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ নির্ধারিত মেয়াদে সমুদয় কাজ সম্পন্ন করে প্রকল্পের নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন নিশ্চিতকরণে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ।
‘ভালুকা-গফরগাঁও-হোসনেপুর সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি নতুন এডিপিভুক্ত প্রকল্প। অনুমোদিত মেয়াদে প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ‘কানাসাখোলা-অষ্টমিতলা সড়ক (জেড-৪৬১৭) (দৈর্ঘ্য ২.৬০ কি.মি.)’ প্রকল্পটি নতুন এডিপিভুক্ত প্রকল্প। অনুমোদিত মেয়াদে প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ‘ময়মনসিংহ অঞ্চলে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন নিশ্চিতকরণসহ প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পাদন করতে হবে। আর ভালো অগ্রগতির প্রকল্পের মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (ময়মনসিংহ জোন)’ এবং নেত্রকোনা সড়ক বিভাগাধীন ডব্লিউপি-৪ ও ডব্লিউপি-৫ প্যাকেজের আওতায় ৭৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগাধীন গফরগাঁও-বরমী-মাওনা সড়কটির বাঁধের উচ্চতা পাঁচ থেকে ছয় মিটার, স্থানভেদে তারও বেশি করতে হবে।
অন্যান্য
‘নেত্রকোনা জেলা সদরে ইনডোর স্টেডিয়াম খেলোয়াড়দের জন্য ডরমিটরি ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যমান টেনিস কমপ্লেক্সের উন্নয়ন’ প্রকল্পে অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ এবং চেয়ার, জিমনেসিয়াম ইক্যুইপমেন্ট, আসবাবপত্র সরবরাহ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। ‘শেরপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়াম নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের মেয়াদকাল, প্রাক্কলিত মূল্য, প্রধান কার্যক্রমসমূহ, ঠিকাদারের নাম ইত্যাদি তথ্য প্রদান করা প্রয়োজন। ‘ত্রিশাল-বালিপাড়া-নান্দাইল (কানুরামপুর) জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ’ প্রকল্পে যথাশীঘ্র ইউটিলিটি শিফটিং কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন এবং প্রকল্পভুক্ত সড়কের লক্ষীচর ও কানুরামপুরে বিদ্যমান সরু বেইলি সেতুর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রশস্তকরণ প্রয়োজন বলে আইএমইডি জানিয়েছে।
এছাড়া ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স জামালপুরের উন্নয়ন’ প্রকল্পের বিষয়ে আইএমইডি বলছে, দলিলে বর্ণিত লগ-ফ্রেম এর ‘পারপাস অ্যান্ড গোল’ অংশ এবং সংশ্লিষ্ট ‘ওভিআই’ অংশ যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। ৯০ শতাংশের ওপরে কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কিছু প্রকল্প পর্যবেক্ষণে ‘চুপ’ আইএমইডি
ময়মনসিংহ বিভাগের বেশিরভাগ প্রকল্পের সমস্যা কিংবা পর্যবেক্ষণ এ সভায় তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগ। তবে বড় একটা অংশের প্রকল্পের সমস্যা কিংবা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেনি আইএমইডি। এর মধ্যে শূন্য অগ্রগতির দুটি প্রকল্পও রয়েছে। ধীরগতির নয়টি এবং ভালো অগ্রগতির প্রকল্প রয়েছে ১০টি। শূন্য ও ধীর অগ্রগতির প্রকল্পের সমস্যা কিংবা পর্যবেক্ষণ না তুলে ধরায় আইএমইডির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
কোনো পর্যবেক্ষণ না দেয়া শূন্য অগ্রগতির দুই প্রকল্প হলো- ‘ডিজিটাল কানেক্টিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ ও ‘ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলাধীন চর আলগী ইউনিয়ন রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণ’ প্রকল্প।
পর্যবেক্ষণহীন ধীর অগ্রগতিসম্পন্ন প্রকল্পগুলো হলো- ‘নেত্রকোনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন’, ‘জামালপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণ’, ‘মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ’, ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে সাইক্লোট্রন ও পেট-সিটি এবং ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিকেল ফিজিক্স (আইএনএমপি), সাভারে সাইক্লোট্রন সুবিধাদি স্থাপন’, ‘শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন’, ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত)’, ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নেত্রকোনা’ এবং ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প।
ভালো অগ্রগতিসম্পন্ন কিন্তু পর্যবেক্ষণহীন প্রকল্পগুলো হলো- ‘জামালপুরে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ’, ‘বালাশী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)‘, ‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’, ‘জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন (প্রথম সংশোধিত)’, ‘প্রযুক্তির সহায়তায় নারী ক্ষমতায়ন’, ‘ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্মেন্ট (ইনফো-সরকার ফেজ-৩)’, ‘মোবাইল গেইম ও অ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন’, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’, ‘ময়মনসিংহ বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন’ এবং ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প।
পিডি/এমএআর/এমএস