জাতীয়

‘আবেদের অবদান চিরদিন স্মরণ রাখবে দেশের মানুষ’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে আর্মি স্টেডিয়ামে এসেছিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Advertisement

আর্মি স্টেডিয়ামে ফজলে হাসান আবেদের জন্য রাখা শোক বইয়ে এই অর্থনীতিবিদ লেখেন- ‘আবেদের সঙ্গে এদেশের সাধারণ মানুষের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তার বিদায়ে এদেশের মানুষ একজন বন্ধু হারালো। তার অবদান এদেশের মানুষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরদিন স্মরণ রাখবে।’

এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার অবদান সর্বব্যাপী। সব উন্নয়নমূলক কাজেই ছিল তার বিচরণ। তিনি বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে ডেভেলপ করেছেন। তার চলে যাওয়া দেশে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তরুণ প্রজন্মকে তার কর্মকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

এর আগে রোববার সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তার মরদেহ সাদা ফুলে ঘেরা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে আর্মি স্টেডিয়ামে আনা হয়।

Advertisement

আর্মি স্টেডিয়ামে আগে থেকেই ব্র্যাকের কর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজন অপেক্ষায় ছিলেন। ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে মেজর আশিকুর রহমান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে উপসামরিক সচিব কর্নেল মো. সাইফুল্লাহ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্রদ্ধা নিবেদন জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আব্দুর রহমান। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান।

ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সকাল ৯টায় সর্বসাধারণের জন্য গেট খুলে দেয়া হয়েছে। একে একে মাঠে প্রবেশ করছেন সবাই। শ্রদ্ধা জানানোর পর দুপুর সাড়ে ১২টায় আর্মি স্টেডিয়ামেই হবে তার জানাজা। এরপর বিকেলে ফজলে হাসান আবেদকে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধী অবস্থায় মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ২৮ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

Advertisement

ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।

১৯৮০ সালে র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ২০১১ সালে ওয়াইজ প্রাইজ অব এডুকেশন, ২০১৪ সালে লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল ম্যারিট, ২০১৫ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পুরস্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সাউথ এশিয়ান ডায়াসপোরা অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় ভূমিকা রাখায় ইয়াডান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

এআর/কেএইচ/জেএইচ/পিআর