খেলাধুলা

এসএ গেমসে ব্যর্থ ফেডারেশনগুলোর কাছে জবাব চাইবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

রেকর্ড ১৯ স্বর্ণ পদক; তারপরও এসএ গেমসে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক আক্ষেপ ক্রীড়া প্রশাসনের। কারণ, সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পাওয়া কয়েটি খেলা এবার চরম ব্যর্থ কাঠমান্ডু-পোখারা এসএ গেমসে।

Advertisement

কেন ব্যর্থ হয়েছে? ফেডারেশনগুলোর কাছে তার কৈফিয়ত চাইবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি এ ইস্যুতে কোনো ছাড় দিতে নারাজ।

নেপালে এসএ গেমসে ডিসিপ্লিন ছিল ২৬টি। এর মধ্যে ২৫টিতেই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এবার ভারত বেশ কয়েকটি খেলায় অংশই নেয়নি। সে সুযোগে বাংলাদেশের স্বর্ণ বেড়েছে। এরপরও কয়েকটি খেলা চরমভাবে হতাশ করেছে।

১৯ স্বর্ণের মধ্যে নাম নেই ফুটবল, শ্যুটিং, সাঁতার, অ্যাথলেটিকসের। যা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। কারণ, এ খেলাগুলো নিয়ে আশাবাদী ছিল দেশবাসী।

Advertisement

গত ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে এসএ গেমস। ভারতবিহীন আরচারি থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ১০টি স্বর্ণ পদক, ভারতবিহীন কারাতে থেকে এসেছে তিনটি স্বর্ণ পদক, ভারত-পাকিস্তানবিহীন ক্রিকেট থেকে দুটি স্বর্ণ পদক, ভারোত্তোলন থেকে এসেছে দুটি স্বর্ণ পদক এবং একটি করে স্বর্ণ পদক এসেছে তায়কোয়ানদো ও ফেন্সিং থেকে।

ভারত ও পাকিস্তান না থাকার পরও ফুটবল দল ফিরেছে ব্রোঞ্জ নিয়ে। নারী ফুটবল দলতো বাফুফে পাঠায়ইনি ভরাডুবির আশঙ্কায়। সাঁতারে এসেছে ৩ রৌপ্য ও ১১ ব্রোঞ্জ, অ্যাথলেটিকসে ১ রৌপ্য ও ১ ব্রোঞ্জ এবং শ্যুটিংয়ে ৬ রৌপ্য ও ৪ ব্রোঞ্জ। কাবাডি ছেলে ও মেয়েদের বিভাগে দুটি ব্রোঞ্জ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো ফলাফল করলে সরকার পুরস্কার দেয়। এখন থেকে ব্যর্থতার জন্য তিরস্কারও থাকবে। আনা হবে জবাবদিহীতার মধ্যে।

২০১৬ সালের এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী তিন ক্রীড়াবিদকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। যার প্রতিটি ফ্লাটের মূল্য প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা করে। এবারও যারা পদক জিতেছেন তারা পাবেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ঘোষিত অর্থ পুরস্কার। যেখানে একক ইভেন্টের স্বর্ণের জন্য পাবেন ৬ লাখ টাকা করে। দলীয় ইভেন্টে স্বর্ণজয়ী প্রতি খেলোয়াড় পাবেন এক লাখ টাকা করে।

Advertisement

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘যে সব ফেডারেশন এসএ গেমসে ব্যর্থ হয়েছে তাদের নিয়ে আমরা বসবো। আলোচনা করবো, জবাব চাইবো- কেন ব্যর্থ হলো। যারা বছরের পর বছর ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের দায়িত্বে অবহেলা কিংবা গাফলতি আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।’

সাঁতার, শ্যুটিং, ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসে স্বর্ণ না পাওয়াটাকে বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখেছেন দেশের খেলাধুলার সর্বোচ্চ ব্যক্তি।

‘আমাদের দেশের অনেক উন্নয়ন খাত থেকে অর্থ এনে খেলাধুলায় দিতে হয় । এটা জনগনের টাকা। কিন্তু সেই টাকায় সফলতা কেন আসছে না সেটা দেখা দরকার। শ্যুটিং, সাঁতার, অ্যাথলেটিকসের কি নেই? এই খেলাগুলো ক্রিকেট-ফুটবলের মতো সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। অথচ যারা কম সুযোগ-সুবিধা পায় এবং বলতে গেলে কিছু নেই,সেই খেলাগুলো থেকে স্বর্ণ এসেছে। অথচ সবল ফেডারেশনগুলো ব্যর্থ, এটা মেনে নেয়া যায় না’- বলেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।

কবে বসবেন ব্যর্থ ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে? ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কেবল তো গেমস শেষ হলো। আমি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছে গেমসের প্রতিবেদন চাইবো। এ দুটি প্রতিবেদন পেলেই বসবো। সবাইকে জবাবদিহীতার মধ্যে থাকতে হবে। আমি জানতে চাইবো কেন তারা ব্যর্থ হলো? কি সমস্যা ছিল? কোনো ঘাটতি ছিল? নাকি ঠিকমতো প্র্যাকটিস হয়নি। এ সমস্যাগুলো আমাকে জানতে হবে। অন্য দেশগুলো যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা কেন এগুতে পারছি না? তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’

শ্যুটিং ফেডারেশন গুলশানে আলীশান কমপ্লেক্স নিয়ে আছে। সুইমিং ফেডারেশনের মিরপুরে পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স আছে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পুল আছে। চাইলে তারা সেনা ও নৌবাহিনীর পুলও ব্যবহার করতে পারে। অ্যাথলেটিক্স আছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ট্র্যাক নিয়ে। তারা বিকেএসপির আধুনিক সুযোগ সুবিধাও ভোগ করেছেন গেমসের অনুশীলনে। অথচ রাজকীয়ভাবে থাকা এই খেলাগুলো নেপাল থেকে ফিরেছে স্বর্নশূন্য হয়ে।

‘অ্যাথলেটিকসের জন্য ১০ কোটি টাকা দিয়ে নতুন ট্র্যাক স্থাপন করে দেবো। এটা জনগনের টাকা। কারো মুখ দেখে তো আর টাকা দেয়া যাবে না। সবাইকে পারফরম করতে হবে। কারণ, আগেই বলেছি উন্নয়নের অনেক খাত থেকে টাকা এনে খেলায় দিতে হয়’- বলেছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।

গত এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ীদের প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট উপহার দেয়া প্রসঙ্গ তুলে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সবার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এরপরও দেখি অনেকে নানা ধরনের মন্তব্য করেন। এটা দুঃখজনক। কেউ কথা বললে পজিটিভ বলতে পারে। কিন্তু মন্তব্য করার সময় কিছুই খেয়াল করে না।’

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘যে সব ফেডারেশন পুরোপুরি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তাদের মধ্যে কেবল শতভাগ সফলতা দেখিয়েছে আরচারি ও ক্রিকেট। বাকিরা কেন এমন করলো সেটা আমাকে দেখতে হবে। আমি প্রত্যেক ফেডারেশনকেই জবাবদিহীতার মধ্যে আনবো।’

আরআই/আইএইচএস/এমএস