বিগত কয়েক বছরে অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত নিরাপদ মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়েছে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। সরকার আইন করে পোল্ট্রি ও মাছের খাবারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এর দায়িত্বহীন ব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালতের রুল জারি হয়েছে। শুধু তাই নয় বিগত কয়েক বছরে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে- যা নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
Advertisement
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে 'জার্নি অব সেইফ পোল্ট্রি প্রোডাকশন ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড রোল অব মিডিয়া' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্যগুলো উঠে এসেছে।
বৈঠকে উপস্থিত পোল্ট্রি ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিম নিয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই এমন কিছু খবর আসে যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত করে।'
সাম্প্রতিক সময়ে এমনই একটি খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যমুনা টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সুশান্ত সিনহা। তিনি জানান, অপর একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষকের গবেষণা ও সাক্ষাৎকার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনিও রিপোর্ট করার জন্য জনৈক শিক্ষকের কাছে যান। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, বাংলাদেশের পোল্ট্রি ফিড নিয়ে গবেষণার দাবি করলেও প্রায় দুই শতাধিক নিবন্ধিত কোম্পানির কোনোটির স্যাম্পল নিয়ে গবেষণা করেননি তিনি। শুধু তাই নয় কোন কোন উপকরণ দিয়ে পোল্ট্রি ফিড তৈরি হয় সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই জনৈক অধ্যাপকের। তিনি তাঁর গবেষণা কর্মে মাত্র দু’টি মুরগি নিয়ে গবেষণা করেছেন। যেখানে এ ধরনের একটি গবেষণায় ৫০০ থেকে কয়েক হাজার মুরগি’র ওপর গবেষণা হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. ইলিয়াস হোসেন। তাছাড়া ওই গবেষণার পদ্ধতি (রিসার্চ ম্যাথডোলজি) নিয়েও প্রশ্ন তোলেন উপস্থিত একাধিক পোল্ট্রি বিজ্ঞানী ও গবেষক।
Advertisement
ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী- ২০১৭ সালে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন এজিপি অলটারনেটিভ এডিটিভস (এ.এ.এ) দেশে আমদানি হয়েছে এবং প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন টন মুরগি ও মাছের খাবার তৈরিতে তা ব্যবহৃত হয়েছে। যা দেশে উৎপাদিত মোট ফিডের প্রায় ৮০ শতাংশ।
তিনি বলেন, 'অ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত ফিড উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদনে ফিড একটি অন্যতম নিয়ামক হলেও নানাভাবেই এতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। যেমন- জবাই করার সময়, প্রসেস করার সময়, স্টোরেজ করার সময় এমনকি রান্নার সময়ও। তাই একদিকে যেমন নজরদারি বাড়ানো, আইন ও নীতিমালা প্রয়োগে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে, অপরদিকে তেমনি ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।'
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার, পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেন, অধ্যাপক ড. শওকত আলী, অধ্যাপক ড. এস সি দাস, অধ্যাপক ড. কে এম এস ইসলাম প্রমুখ।
বৈঠকে মিডিয়া প্যানেলে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, আরটিভি’র প্রধান বার্তা সম্পাদক লুৎফর রহমান, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি’র প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ সৈকত এবং এসএ টিভি’র বার্তা সম্পাদক সালাহউদ্দীন বাবলু।
Advertisement
এমইউ/এফআর/এমএস