মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণে দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করেছে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’। এটি গত ১ ডিসেম্বর চালু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
Advertisement
ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ)-এর নিজস্ব উদ্যোগ হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক। বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকটি স্থাপন করা হয়েছে।
যেসব মায়ের সন্তান জন্মের পর মারা গেছে কিংবা নিজের সন্তানকে খাওয়ানোর পরও মায়ের বুকে অতিরিক্ত দুধ আছে, তারা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে দুধ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। যেসব নবজাতকের জন্মের পরই মা মারা গেছেন কিংবা যাদের মা অসুস্থতার জন্য দুধ খাওয়াতে পারছেন না, সেই নবজাতকরা এ দুধ খেতে পারবে।
সেই সঙ্গে দত্তক নেয়া সন্তানের অভিভাবকরা এখান থেকে দুধ নিয়ে খাওয়াতে পারবেন। সমাজে বিভিন্ন সময় স্বজনরা নবজাতককে ফেলে দেন। এ রকম স্বজন-পরিত্যক্ত নবজাতকদের বাঁচাতেও মিল্ক ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ ও বিতরণে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নেয়া হবে না বলে জানা গেছে।
Advertisement
ইনস্টিটিউটের এনআইসিইউ ও স্ক্যানোর ইনচার্জ এবং মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান জানান, সবচেয়ে বেশি (২১৬টি) হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক রয়েছে ব্রাজিলে, যার মাধ্যমে ২৮ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু এবং ৭৩ শতাংশ শিশুর অপুষ্টি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। ভারতেও এ ব্যাংক স্থাপনের পর নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব মায়ের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হবে, সেই মায়েদের মারাত্মক রোগ (হেপাটাইটিস বি এবং এইচআইভি) আছে কি-না তা পরীক্ষা করে করে নেয়া হবে, যাতে কোনো নবজাতক রোগের ঝুঁকিতে না পড়ে।
আইসিএমএইচের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে, তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ এবং অন্য নবজাতকদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যাতে ইসলামি শরিয়াহর কোনো লঙ্ঘন না হয়, সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। মুসলিম দেশের মধ্যে প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপন করা হয় কুয়েতে। এছাড়া ইরান, ইরাক, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক মুসলিম দেশ হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে।
মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে এর যাত্রা শুরু। ব্যক্তি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় মিল্ক ব্যাংকটি স্থাপনে এখন পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সরকার, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা ব্যক্তির অনুদান এবং ইনস্টিটিউটের নিজস্ব অর্থে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
Advertisement
ইনস্টিটিউটটির দেয়া তথ্য বলছে, গত বছর স্ক্যানো ও এনআইসিইউতে ১ হাজার ৮৬৫ জন নবজাতক ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৪৮৮ জনই গুরুতর অসুস্থ ছিল।
এমএসএইচ/এমএস