অর্থনীতি

ইসির আবদার নাকচ করল অর্থ মন্ত্রণালয়

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কয়েকটি খাতে বরাদ্দ দেয়া ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯০ টাকা অযৌক্তিকভাবে অন্য খাতে খরচ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে নির্বাচন কমিশনের এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, একটা প্রতিষ্ঠান সবদিক বিবেচনায় নিয়ে তারাই অর্থবছরের শুরুতে বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দের আবেদন করে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ বরাদ্দ মঞ্জুর করে এবং সে অনুযায়ী বাজেট প্রস্তুত হয়। তবে বিশেষ কোনো কারণে অন্য কোনো খাতে বেশি বরাদ্দের প্রয়োজন দেখা দিলে বরাদ্দ দেয়া অর্থ পুনঃউপযোজন (এক খাতের বরাদ্দ অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার) করা হয়।

তবে সেটা অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। কিন্তু এবার ইসি কয়েকটি খাতে বরাদ্দের পুরো অর্থই অন্য খাতে খরচের জন্য আবেদন করেছে। যেটা যৌক্তিক মনে করছে না অর্থ বিভাগ।

ইসির প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ভোটার লিস্ট প্রস্তুতকরণ কার্যক্রমে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ক্রয় বাবদ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি টাকা। এর পুরোটাই জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন খাতে খরচ করতে চায় ইসি।

Advertisement

একইভাবে ভোটার লিস্ট প্রস্তুতকরণ কার্যক্রমে অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়বাবদ তিন কোটি টাকা এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ক্রয়বাবদ বরাদ্দ তিন কোটি টাকা পরিচয় নিবন্ধন খাতে খরচ করতে চায় ইসি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সচিবালয় খাতে থোক বরাদ্দ ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকার মধ্যে তিন কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকাও পরিচয় নিবন্ধন খাতে পুনঃউপযোজনের জন্য চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়সমূহের উন্নয়নে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ক্রয়বাবদ বরাদ্দ সাত কোটি টাকা থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে চায় কমিশন। এভাবে কয়েকটি খাতে বরাদ্দ ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৯০ টাকা অন্য খাতে বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পুনঃউপযোজনের জন্য চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে প্রস্তাবিত পুনঃউপযোজনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরাদ্দ অর্থের পুরো অর্থই পুনঃউপযোজনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

‘এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে ইসির সংশ্লিষ্ট উপ-সচিবের (বাজেট) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তিনি বিষয়টিতে সুস্পষ্ট ব্যাখা প্রদান করতে অপারগতা জ্ঞাপন করেছেন। তাই ইসির পুনঃউপযোজনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।’

Advertisement

অর্থ বিভাগের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, অর্থবছরের মাত্র পাঁচ মাস পার হয়েছে। পরবর্তীতে বরাদ্দ খাতে অর্থের প্রয়োজন পড়লে তার সংকুলান কঠিন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের পক্ষে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ।

উল্লেখ্য, গত বছর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লুটের অভিযোগ ওঠে। বিগত দুটি নির্বাচনে প্রশিক্ষণ বাবদ ১২৩ কোটি টাকা নামমাত্র খরচ করা হয়। বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা, কোর্স পরিচালক ও কোর্স সুপারভাইজার নামে ভাইচার প্রস্তুত করে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ ওঠে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) বিরুদ্ধে।

এমইউএইচ/এমএআর/জেআইএম