জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ও একাডেমিক ভবন প্রদক্ষিণ করে মুরাদ চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
Advertisement
সমাবেশে বক্তারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করা ও আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় মদদের অভিযোগে তার অপসারণ দাবি করেন।
এ সময় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে মহাপরিকল্পনার কাজ যেন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয় এ দাবিতেই আমরা আন্দোলন শুরু করি। এখন দেখা যাচ্ছে, কেমন অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে মহাপরিকল্পনার কাজ চলছে। উপাচার্য স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করছেন। সুদূরপ্রসারী এবং পরিকল্পিত উন্নয়নের দাবিতেই আমরা রাস্তায় নেমেছি। অথচ উপাচার্যের মদদে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সুতরাং, তিনি উপাচার্য পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন।’
আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা নষ্ট করেছেন উপাচার্য। তিনি হল খোলার বিষয়ে সরকারের কাছে অনুমতি চান। একইভাবে তিনি পদত্যাগ করবেন কি-না সে ব্যাপারেও সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। অর্থাৎ তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপদস্থদের হস্তক্ষেপ কামনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নষ্ট করছেন। কাজেই অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে আর এ পদে দেখতে চাই না। তাকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
Advertisement
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক রনি, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ওয়াসিম সাজ্জাদ, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য ইকবাল হোসাইন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের মধ্যস্থতায় ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলনে। ১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরের দিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের মারধর করে সরিয়ে দেয়। ওই দিনই সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ৮ নভেম্বর উপাচার্যের ‘দুর্নীতির’ তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন আন্দোলনকারীরা। হল বন্ধের দীর্ঘ এক মাস পর গত ৫ ডিসেম্বর থেকে আবারও ক্যাম্পাস সচল হয়েছে।
ফারুক হোসেন/এমবিআর/এমএস
Advertisement