বিনোদন

ভাইরাল হওয়া ডাক্তার দম্পতিকে নিয়ে যা বললেন হানিফ সংকেত

বাংলাদেশে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটির নাম ‘ইত্যাদি’। বছরের পর বছর আলাদা সৌরভ নিয়ে মানুষের মনে স্থান করে আছে অনুষ্ঠানটি। গত ২৯ নভেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে আমেরিকার ডাক্তার দম্পতি জেসন-মেরিন্ডিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার হয়। এরপর আলোচনার শিরোনামে চলে আসেন এই ডাক্তার দম্পতি।

Advertisement

ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির এই পর্বটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন দর্শক। বেশির ভাগ দর্শকই প্রশংসা করেছেন এই আয়োজনটির। মঙ্গলবার রাতে এই ডাক্তর দম্পতিকে নিয়ে হানিফ সংকেত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এখানে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন তিনি।

হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘গত ২৯ নভেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে আমেরিকার ডাক্তার দম্পতি জেসন-মেরিন্ডিকে নিয়ে আমরা একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছিলাম। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদনটি যেমন ইউটিউব এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি সর্বমহলে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলও এই ডাক্তার দম্পতির মানবিক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন এবং ইউটিউবে অনেকেই প্রশংসাসূচক ভিডিও নির্মাণ করেছেন।

পাশাপাশি ২/১ জন আবার প্রতিবেদনটির কিছু তথ্য বিভ্রান্তি আছে জানিয়ে পাল্টা ভিডিও নির্মাণ করেছেন এবং কেউ কেউ ভুল বুঝে বিষয়টির ভিন্নতর ব্যাখ্যাও করেছেন। আবার দর্শকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ভুল বুঝতে পেরে ভুল তথ্য সম্বলিত ভিডিওর নির্মাতা তার ভিডিওটি ডিলিট করে নতুন ভিডিও আপলোড করে দুঃখ প্রকাশও করেছেন।’

Advertisement

হানিফ সংকেত আরও বলেন, ‘আসলে ইত্যাদিতে কখনোই কারো বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কিছু করা হয় না বা বলা হয় না। আমরা কাজ করি একটি দায়বোধের জায়গা থেকে। সমাজের বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরে সমাজকে পরিশুদ্ধ করতে ইত্যাদি যেমন নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি আমাদের নাগরিক সচেতনতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেও ভূমিকা রাখছে আন্তরিকতার সঙ্গে। আমাদের চিন্তা থাকে কীভাবে দর্শক হৃদয়ে স্থান পাওয়া যায়।

তাই অনুষ্ঠান নির্মাণে আমাদের আন্তরিকতা, সততা থাকে শত ভাগ। সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবীয় অঙ্গীকার ও মূল্যবোধের চেতনা থেকেই ইত্যাদিতে বিভিন্ন বিষয় ও আঙ্গিকে প্রতিবেদন প্রচার হয়ে আসছে নিয়মিত এবং সমাজে তার একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ইত্যাদিতে কারো অবমূল্যায়ন করা হয় না। ইত্যাদিকে বলা হয় সকল শ্রেণী, পেশা ও সব বয়সী মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতিই রয়েছে আমাদের সমান শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান।

আর একটি কথা, এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের মূল শ্লোগান ছিলো, ‘সত্য-মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’। সুতরাং কারো সম্পর্কে কিছু বলার বা লেখার আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করে লেখাটাই সৎ মানুষের কাজ। সুতরাং আসুন আমরা প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি-অপব্যবহার নয়।’

প্রসঙ্গত, ডা. এড্রিক বেকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে আসেন জেসিন-মেরিন্ডি দম্পতি। এরিড ব্রেকার নিউজল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে এসে টানা ৩২ বছর টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কালিয়াকুড়ি গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দিয়েছেন। গড়ে তুলেছিলেন হাসপাতাল। সবাই তার মানবসেবায় মুগ্ধ হয়ে ডাক্তার ভাই বলে ডাকতেন।

Advertisement

দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে অনেকেই চেয়েছিলেন তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দিতে। তিনি ঢাকা যাননি। নিজের তৈরি হাসপাতালেই ২০১৫ সালে মারা যান এড্রিক বেকার।

মৃত্যুর আগে তিনি চেয়েছিলেন এ দেশের কোনো ডাক্তার যেন গ্রামে এসে তার প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের হাল ধরেন। দেশের কেউ সাড়া না দিলেও তার আহ্বানে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছেন ডাক্তার দম্পতি জেসিন এবং মেরিন্ডি। নিজেদের সন্তানদেরও সাথে করে নিয়ে এসেছেন তারা। ভর্তি করেছেন গ্রামেরই স্কুলে। ইত্যাদিতে দেখানো হয় তারা থাকেন মাটির ঘরে। ডা. জেসিন গ্রামের মানুষদের মতই লুঙ্গি পরেন। তার স্ত্রী মেরিন্ডি পরেন শাড়ি। দুজনই বাংলা শিখেছেন। তাদের ছেলেমেয়েরাও এখন বাংলায় কথা বলে।

এমএবি/পিআর