দেশজুড়ে

পুলিশের ভুলে ৯ দিন জেল খেটে অবশেষে মুক্তি

৯ দিন কারাবাসের পর আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেলেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি গ্রামের নিরাপরাধ কৃষক আব্দুল আজিজ দফাদার (৬১)। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে শুনানি শেষে যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহাদত হোসেন তাকে মুক্তির আদেশ দেন। সন্ধ্যায় এ আদেশ যশোর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে তাৎক্ষণিক কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

Advertisement

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলার আবু তালেব জানান, নিরাপরাধ আব্দুল আজিজকে মুক্তির আদেশ-সংক্রান্ত আদালতের রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছানোর পর দ্রুত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুক্তির পর পুলিশ প্রহরায় আব্দুল আজিজকে তার গ্রামের বাড়ি চৌগাছার সিংহঝুলিতে পৌঁছে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে লোহিত মোহন সাহার ছেলে নবকুমার সাহার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২৩ অক্টোবর নবকুমার সাহা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন। ওই মামলার চার্জশিটে আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি মাঠপাড়া গ্রামের আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজ কারিগরকে।

Advertisement

চার্জশিটে যার বয়স উল্লেখ করা হয় ৩০ বছর। ২০১২ সালের ১ মার্চ পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। পরবর্তীতে আব্দুল আজিজ ২০১২ সালের ৫ মার্চ জামিনে মুক্তি পেয়ে কাতারে চলে যান। প্রবাসে চলে যাওয়ায় আসামি আব্দুল আজিজ আদালতে গড় হাজির থাকেন। ফলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ চলতি বছরের ৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

এই পরোয়ানায় গত ৯ ডিসেম্বর রাতে চৌগাছা থানা পুলিশের এএসআই আজাদের নেতৃত্বে পুলিশ প্রকৃত আসামি আহাদ আলী কারিগরের ছেলে আব্দুল আজিজকে বাদ দিয়ে মৃত আহাদ আলী দফাদারের ছেলে আব্দুল আজিজ দফাদারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

চৌগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব জানান, প্রকৃত আসামির নাম, বাবার নাম, গ্রাম একই হওয়ায় ভুলবশত পুলিশ আবদুল আজিজকে গ্রেফতার করে। বিষয়টি তাদের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি গত ১৫ ডিসেম্বর আদালতে ভুল স্বীকার ও প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

মামলার প্রকৃত আসামি আব্দুল আজিজের আইনজীবী ছিলেন যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহানুর আলম শাহিন। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে শুনানি চলাকালে তাকেও আদালতে ডেকে পাঠানো হয় এবং সেখানে তিনি আটক আজিজ যে প্রকৃত আসামি নয় সেটা আদালতকে অবহিত করেন।

Advertisement

এর আগে পুলিশের ভুলে অন্যের অপরাধে তিনমাস ধরে জেলের ঘানি টানতে হয় যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা গ্রামের খাইরুল বিশ্বাসের নিরাপরাধ ছেলে সবুজ বিশ্বাসকে। পরবর্তীতে গত ২২ মে আদালত তাকে মুক্তির নির্দেশ দেয়। এছাড়া যশোরে শিরিন বেগম নামে এক নারীকে মাদক মামলায় আদালত সাজা দেয়ার পর তার পরিবর্তে রেখা খাতুন নামে অপর এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছিল। পরে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান রেখা।

মিলন রহমান/আরএআর/পিআর