বিনোদন

ঢাকাই সিনেমার রাণী শাবনূরের জন্মদিন আজ

সিনেমাপ্রেমীদের দুই নয়নে আলোর ঝিলিক খেলে যায় তার নাম শুনলে। একটা সময় তার নামেই সিনেমা হল ভরে যেত দর্শকে। তাকে ডাকা হত ঢাকাই সিনেমার রানী বলে। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন নব্বই পরবর্তী বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল নায়িকা শাবনূর।

Advertisement

স্নিগ্ধ চেহারা, মায়াবী হাসি, চিরায়ত বাঙালি নারীর মধুমাখা চাহনি আর প্রাণবন্ত অভিনয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আসন করে নিয়েছেন তিনি। আজ (১৭ ডিসেম্বর) তার জন্মদিন। ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁতেই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে অনেকে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেছেন শাবনূরকে।

অনেক দিন হলো অভিনয় থেকে দূরে সরে আছেন শাবনূর। তবে তার জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি এখনও। হঠাৎ কোথাও কোনো অনুষ্ঠানে হাজির হলে তাকে দেখতে ঢল নামে মানুষের। নতুন ছবিতে তাকে দেখার জন্য অপেক্ষায় তার ভক্তরা।

২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অনিক মাহমুদকে বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে সেখানেই থাকেন এই নায়িকা। তার ভক্তরা জেনে গেছেন খুশির খবর। আবারও সিনেমায় ফিরতে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। নিয়মিত জিম করে নিজেকে তৈরি করছেন সিনেমার জন্য। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সেই আভাসও দিয়ে গেছেন শাবনূর।

Advertisement

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলচ্চিত্রই আমাকে আজকের শাবনূর বানিয়েছে। আমার যতো সুনাম সব দিয়েছে চলচ্চিত্র। এখনো সিনেমা ও সিনেমার মানুষ আমার কাছে সবচেয়ে আপনজন। আর এই সিনেমার হাত ধরে মানুষের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি সেটাই আমার জীবনের সেরা উপহার। সবার কাছে দোয়া চাই যেন ছেলেকে নিয়ে ভালো থাকতে পারি। সবার জন্য আমিও অনেক দোয়া করি।’

জানা গেছে, পারিবারিক আয়োজনে ঘরুয়াভাবেই কাটবে শাবনূরের জন্মদিন। একান্তই কাছের কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা হতে পারে। গল্প-আড্ডা আর স্মৃতিচারণে মুখর হবেন তাদের সঙ্গে।

১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন শাবনূর। তার পর্দার পেছনের নাম নুপুর। প্রথম চলচ্চিত্র কিংবদন্তি পরিচালক এহতেশামের ‘চাঁদনী রাতে’। ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর ‘চাঁদনী রাতে’ মুক্তি পায়। সাব্বিরের বিপরীতে অভিনীত চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়।

তবে শাবনূরের মুগ্ধতার ইতিহাস শুরু হয় ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ ছবিটি দিয়ে। সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বেঁধে এই নায়িকা ১৪টি ছবি করেন। তার সবগুলোই রেকর্ড সংখ্যকভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য পায়। এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সফল জুটিগুলোর অন্যতম। বলা হয়ে থাকে সালমান-শাবনূর জুটি ইন্ডাস্ট্রির মিথ।

Advertisement

পরবর্তীতে এদের আদর্শ মেনেই এখানে নায়ক-নায়িকার জুটি গড়ে উঠেছে। তবে সালমানের যুগে ওমর সানী, অমিত হাসান, আমিন খান, বাপ্পারাজদের সঙ্গেও অভিনয় করে সফলতা পান শাবনূর।

সালমান মৃত্যু পরবর্তী সময়ে রিয়াজ, শাকিব খান ও ফেরদৌসসহ অনেক নায়কের সঙ্গেই অভিনয় করে সফল হন শাবনূর। তবে রিয়াজের সঙ্গে প্রায় অর্ধশত চলচ্চিত্রে জুটি বাঁধেন তিনি। এবং সবগুলো ছবিই ছিলো ব্যবসায়িকভাবে সফল এবং আলোচিত। বলা হয়ে থাকে, রিয়াজ-শাবনূর জুটির পর ঢাকাই চলচ্চিত্রে সার্বজনীনভাবে জনপ্রিয় সুপারহিট আর কোনো জুটি আসেনি।

এই জুটির ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘এ বাঁধন যাবে না ছিড়ে’, ‘মন মানে না’ ইত্যাদি ছবিগুলো মাইলফলক হয়ে আছে এদেশীয় চলচ্চিত্রে ব্যবসায়িক সাফল্যের ইতিহাসে।

ব্যক্তি জীবনে ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয় এবং ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে বিয়ে করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন ও নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ছেলে সন্তানের মা হন। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনে শাবনূরের সবচেয়ে বড় অর্জন ভক্ত-দর্শকের ভালোবাসা। পাশাপাশি অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত দুই নয়নের আলো চলচ্চিত্রের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এখন শুধুই আবারও পর্দায় ফেরার অপেক্ষা শাবনূরের।

এমএবি/এমআরএম