আন্তর্জাতিক

দেয়ালে দেয়ালে ইরাকের নারী জাগরণের চিত্র

বেকারত্ব, দুর্নীতি, অনুন্নত সরকারি সেবা, জীবনমানের নাজুক অবস্থা, অন্য রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপসহ নানামুখী সঙ্কটের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন ইরাকের জনগণ। আন্দোলনে এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন চার শরও বেশি মানুষ। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি।

Advertisement

ইরাকের এবারের বিক্ষোভের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো ধর্মীয়ভাবে স্বাধীনতাহীন ও অবহেলিত দেশটির নারীদের এবারের বিক্ষোভে স্বতস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ। যে দেশের সমাজ ব্যবস্থা এখনো পিতৃতান্ত্রিক, যে দেশে নারীদের ঘরের বাইরে যেতে পারতো না তারা এবার সব শেকল ভেঙে বাইরে এসে নিজের দাবি জানাচ্ছে অকপটে।

বিক্ষোভে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি উদযাপনে রাজধানী বাগদাদের দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে তাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

Advertisement

ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল ও পুরুষতান্ত্রিক একটা সমাজে নারীদের কীভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে তারই চিত্র তুলে ধরছে এসব ম্যুরাল।

বাগদাদের তাহরির স্কয়ার। সব ধরনের বিক্ষোভের উৎপত্তিস্থল। প্রকাশ্যে জনমানুষের বিক্ষোভ প্রদর্শনের বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এই জায়গাটি।

Advertisement

ইরাকের নারীদের সাহস ও শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েে দেয়ালচিত্র করার মতো বিষয়টি বিক্ষোভের দৃশ্যমান উপস্থাপনের একটি আইকন হয়ে উঠেছে।

বেশিরভাগ নারীদের তৈরি এসব শিল্পকর্ম তারা তাদের ভবিষ্যতকে নির্মাণ করতে কীভাবে নিজেরাই ভূমিকা রাখতে চায় তাই ফুটিয়ে তুলছে।

বিক্ষোভ এবং ম্যুরালগুলি নারীদের একটি সম্মিলিত সম্প্রদায় তৈরি করতে, তাদের জাতীয় পরিচয়ের দাবি জোড়ালো করতে এবং নিজেদের ইতিহাস পুনরায় লেখার পক্ষে তাদের সক্ষম করে তুলছে।

নিরাপত্তার কথা বলে বাবা-মা ও স্বামীর আপত্তি সত্ত্বেও এবং গত আড়াই মাসের এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চার শতাধিক মানুষের মৃত্যুও তাদেরকে স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। অনেকে গোপনে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

দেয়ালচিত্রগুলো সেইসব নারীর প্রতিনিধিত্ব করছে যারা অতীতে রাজনৈতিক আন্দোলেন যোগ দিতে পারতেন না, অবহেলিত হতেন তাদের জন্য। তবে তারা এবারের এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন স্বতস্ফূর্তভাবে, কেননা এই বিক্ষোভে কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।

নারী-পুরুষের ব্যাপক বৈষম্যের একটা দেশে উভয়ই এখন তারা হাতে হাত রেখে বিক্ষোভ করছে। প্রকৃত সত্যটা হচ্ছে তারা একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতির একটা বৈশ্বিক মাণদণ্ড তৈরি করতে চায়। বর্তমানের অগ্রণতান্ত্রিক আর দুর্বল রাষ্ট্র ব্যবস্থার অবসান চায় তারা।

এসএ/এমএস