ফরিদপুরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমা (১৪) নিখোঁজ হওয়ার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে জেলা পুলিশের অফিসিয়াল পেজে ১১ সেকেন্ড ও ১৯ সেকেন্ডের দুটি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়।
Advertisement
প্রকাশিত ওই ফুটেজে গোল চিহ্নিত সন্দেহভাজন খুনির পরিচয় শনাক্ত করে দিতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেন।
‘ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ, ফরিদপুর’ নামের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ব্র্যান্ডিং মেলার মাঠ থেকে বাম হাত ধরে ফাতেমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি।
প্রথম ফুটেজটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের। ১৯ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে দেখা যায়, সন্দেহভাজন ওই খুনি মেলার শিশু কর্ণারের দিকে একটি স্টলের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে বাশের খুঁটির কাছে এসে উঁকিঝুঁকি মারছে।
Advertisement
এর পরের ১১ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ফাতেমার হাত ধরে মেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি। ফুটেজে শনাক্ত ওই সন্দেহভাজন খুনির বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার পরনে অফ হোয়াইট রঙের কালো স্টেপের ফুলহাতা জামা ও একটি ফেড করা জিন্স প্যান্ট। আর ফাতেমার পরনে ছিল কমলা রঙের একটি পায়জামা। এ পায়জামাটি পুলিশ ফাতেমার মরদেহের সঙ্গে উদ্ধার করেছে।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান (বিপিএম) জানান, সিসি টিভিতে পাওয়া ওই ফুটেজ ফাতেমার মা-বাবাকে ফুটেজটি দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারা সন্দেহভাজন ওই খুনিকে চিনতে পারেননি।
তিনি জানান, তিন দিন আগে ওই সন্দেহভাজন খুনিকে একটি দোকানের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখছেন ফাতেমার বাবা। ওই দোকান থেকে সে সিগারেট কেনে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেন বলেন, ভিডিও ফুটেজটি সংগ্রহ করে সম্ভাব্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারেনি। এ জন্য এটি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে।
Advertisement
তিনি বলেন, আমার চাকরি জীবনে এমন মর্মান্তিক ঘটনা দেখিনি। মেয়েটি বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী। সে একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতো। সে খুবই মিশুক ছিল। এলাকার সবার সাথে মিলেমিশে থাকতো। কেউ ডাক দিলে চলে যেত।
ফেসবুকে সিসি টিভি ফুটেজ ছাড়ার প্রসঙ্গে এস আই জাকির হোসেন বলেন, যদি কেউ সন্দেহভাজন ওই খুনির পরিচয় দিতে পারে তাহলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত করবেন।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিখোঁজ হন বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমা বেগম (১৪)। এর পরের দিন শুক্রবার সন্ধার একটু পর সাড়ে ৬টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজের পাশে টেলিগ্রাম কার্যালয় চত্বর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিবস্ত্র ফাতেমার গলায় ফাঁস দেয়া ছিল। তাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এখনও ফাতেমার মরদে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ফাতেমার বাবার নাম এলাহি শরিফ। তিনি রিকশা চালানোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা বড়। ফাতেমা জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক)। ওই কিশোরী বাবার সাথে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো।
এ ঘটনায় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্রী শিশু ফাতেমা হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের বিক্ষোভ মিছিল করে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। রোববার দুপুরে নিহত ফাতেমার সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে স্মারকলিপি দেয়। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্মারকলিপি গ্রহণ করে ফাতেমা হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টাস্তমুলক শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দেন।
রোববার বিকেলে একই দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে প্রায় আধাঘণ্টা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতারা। জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি শ্রিপা রায়ের সভাপতিত্বে প্রতিবাদী সমাবেশ চলাকালে বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বলাই পাল, সহ-সভাপতি ইমদাদ মিয়া, সাংবাদিক রেজাউল করিম, মহিলা পরিষদের ফরিদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হোসনেয়ারা খানম, সদস্য উপমা দত্ত, উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর সভাপতি আব্দুল মোতালেব, শিক্ষার্থী আলামিনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় বক্তারা অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার দাবি করেন।
বি কে সিকদার সজল/এমএসএইচ