আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দল নিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ থেকে কৌশলগত দূরত্ব বজায় রাখছে বিএনপি। উপরন্তু মুক্তিমঞ্চের কার্যক্রমে বিএনপির নেতাদের অসন্তোষের ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে এ জোটের আষ্টেপৃষ্ঠে রয়েছে জামায়াত। স্বাধীনতাবিরোধী দলটির ব্যাপারে মুক্তিমঞ্চের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্য এ জোটকে জামায়াতের নয়া প্লাটফর্ম হিসেবেই পরিচিত করেছে রাজনৈতিক মহলে।
Advertisement
বিএনপির নেতৃত্বে হতাশা প্রকাশ করে ২০ দল থেকে সমমনা কয়েকটি দল নিয়ে জাতীয় মুক্তিমঞ্চ গঠন করেন জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি-একাংশ) সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। এ মঞ্চে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা, খেলাফত মজলিস ও ন্যাশনাল মুভমেন্টকেও দেখা যায়। গত জুনের শেষ দিকে এ জোট গঠনের সময় জামায়াতের সাফাই গেয়ে মুক্তিমঞ্চের প্রধান উদ্যোক্তা ও এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়। আজ যারা জামায়াত করে তারা বাংলাদেশের। তারা এ দেশকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে অনেক সংশোধন এসেছে। তারা নিজেদের মধ্যে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা দেশপ্রেমিক শক্তি। কাজেই আমরা আশা করব, যারা দেশকে ভালোবাসে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়, দেশবাসীকে মুক্ত করতে চায়, যারাই আমাদের সঙ্গে আসবে, সবাইকে আমরা সঙ্গে রাখব। তবে দালালদের নয়।’
গত অক্টোবরে মুক্তিমঞ্চের এক অনুষ্ঠানে অলি আহমদের পাশে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ারকে দেখা যায়। এরপর মুক্তিমঞ্চের শরিক দলগুলোর কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিতি দেখা যায় জামায়াত নেতাদের।
অন্যদিকে সংবাদমাধ্যম মুক্তিমঞ্চের বিষয়ে নানাভাবে যোগাযোগ করলে বিএনপি নেতাদের অসন্তোষ প্রকাশ পায়। আগে ২০ দলীয় জোটের যেকোনো শরিক দলের কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেলেও মুক্তিমঞ্চ গঠনের পর সেই ধারাবাহিকতার ছন্দপতন ঘটে। বিশেষ করে মুক্তিমঞ্চের দলগুলোর কর্মসূচিতে বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের আর দেখা মেলে না।
Advertisement
গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এলডিপির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জাতীয় মুক্তিমঞ্চের শরিকদের উপস্থিতি থাকলেও বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। তবে জামায়াতের একাধিক নেতা সেখানে বক্তব্য রাখেন।
গত ৪ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুক্তিমঞ্চের আরেক শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন, এমনটি বলা হলেও পরে তাকে সেখানে দেখা যায়নি। অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এ অনুষ্ঠানে জামায়াতের দুই নেতাকে পাশে বসিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
৬ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মুক্তিমঞ্চের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী থাকবেন বলে জাগপার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে জানানো হয়। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানেও বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের দুই নেতাকে দেখা যায়নি। তবে এ অনুষ্ঠানে যথারীতি জামায়াত ও মুক্তিমঞ্চের শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি ছিল।
মুক্তিমঞ্চের শরিক দলগুলোর অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দেখা না গেলেও এ জোট এবং এলডিপির অলি আহমদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আব্দুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে যে নতুন এলডিপি গঠিত হয়, সে দলের গত ১১ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এখানে অবশ্য জামায়াতের কোনো পর্যায়ের নেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
Advertisement
২০ দলীয় জোটের যেসব শরিক জাতীয় মুক্তিমঞ্চ গঠন করেছে, বিএনপি তাদের এড়িয়ে চলছে কি-না জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেখুন, জাতীয় মুক্তিমঞ্চের বিষয়টি অলি আহমদের নিজস্ব ব্যাপার। তিনি তার দল নিয়ে এটা করেছেন। এটা নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই বা করার কিছু নেই। তিনি যেটা সঠিক মনে করেছেন সেটা করেছেন। এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করার কিছু নেই।’
একই প্রশ্ন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে করা হলে তিনি বলেন, ‘এড়িয়ে যাওয়ার কী আছে? শরিক যারা আছে, তারাই তো ২০ দলের সঙ্গে কাজ করতে চায়। গতকালও তার দলের (এলডিপি) সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিভক্তি হয়েছে, তবে বিভক্ত অংশও কাজ করতে চায়। ওই রকম… যাওয়ার মতো কিছু নয়। সবাই তো ২০ দলেই আছে।’
‘আপনাদের কী বলে, না বলে জানি না; আমাদের তারা সবাই বলে, তারা ২০ দলেই আছে। আমাদের যে মূল দাবি, জনগণের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে খালেদা জিয়ার মুক্তি- এ বিষয়টা নিয়ে তারা নিজেরা কেউ কেউ কাজ করার চেষ্টা করছে।’
কেএইচ/এইচএ/এমএআর/এমএস