বেশ কিছুদিন হলো, নিজেদেরকে ক্রিকেট পরাশক্তির জায়গা থেকে হারিয়ে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রোটিয়ারা। ভারত সফরে এসে পুরোপুরি নাকানি-চুবানি খেয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল।
Advertisement
সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রোটিয়ারা এবং তারই অংশ হিসেবে নতুন ক্রিকেট ডিরেক্টর হিসেবে সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথকে নিয়োগ দেয়ার পর নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মার্ক বাউচারকে।
গ্রায়েম স্মিথই মূলতঃ সাবেক সতীর্থ বাউচারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন। তার বিশ্বাস, নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মার্ক বাউচারই হলেন উপর্যুক্ত ব্যক্তি।
শনিবার আগামী চার বছরের জন্য কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েই সামনের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে হুঙ্কার ছাড়লেন বাউচার। বলে দিলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা আহত ষাঁড়, তাদের থেকে সতর্ক থেকো।’
Advertisement
চলতি মাসেরই শেষ সপ্তাহে, অর্থ্যাৎ বক্সিং ডে থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সিরিজ। ৪ম টেস্টের ওই সিরিজে স্বাগতিক কিন্তু প্রোটিয়ারাই। মার্ক বাউচার এবং গ্রায়েম স্মিথ অ্যান্ড কোংয়ের সামনে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। এই অ্যাসাইনমেন্টই হয়তো নির্ধারণ করে দেবে আগামী দিনগুলোর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্য।
তবে মার্ক বাউচার যে মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব নিলেন, তাতে প্রতিপক্ষের ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নিজেদের সামর্থ্য সম্পর্কে জেনেই তিনি প্রতিপক্ষ সম্পর্কে হুঙ্কার ছাড়লেন।
ইংল্যান্ডকে হুমকি দিতে গিয়ে মার্ক বাউচার বলেন, ‘তারা মিডিয়ায় অনেক কথাই বলেছে। তবে আমি শুধু একটি বিষয়ই বলতে চাই, আহত ষাঁড় থেকে সতর্ক থাকুন। বিশেষ করে আফ্রিকায়।’
অর্থ্যাৎ নিজেদের ঢেরায় আহত হলেও ষাঁড় যেমন সিংহকে ধরাশায়ী করে ফেলে, দক্ষিণ আফ্রিকাও ইংল্যান্ডকে সেই লড়াইয়ের আহ্বান জানাচ্ছে।
Advertisement
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর গত সাতটি বছর মার্ক বাউচার আবার কাজ করেছেন তার দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন প্রজেক্টে। যে কারণে আহত ষাঁড় সম্পর্কে তার ভালোই জ্ঞান রয়েছে। চলমান জীব-বৈচিত্র্য সম্পর্কেও তার বেশ ভালো ধারণা রয়েছে।
তবে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতারও সম্মুখিন হন তিনি। ভয়াবহ এক ইনজুরির শিকার হয়ে বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। যে কারণে জঙ্গলের জীবন ছেড়ে চলে আসেন বাউচার। এরপর মনযোগি হন ক্রিকেটে এবং চেষ্টা চালিয়ে যান কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার।
দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্লাব টাইটান্সের কোচ হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন করে ৫টি ট্রফি জেতেন। একই সঙ্গে ৬ষ্ঠ ট্রফি হয়ে যেতে পারে এবার যদি এমজানসি সুপার লিগে ফাইনালে টিসোয়ানে স্পার্টান্স জিততে পারে।
তবে তার আগেই পেয়ে গেলেন জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব। সামনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ম্যাচ। দুটি ম্যাচ খেলে ফেললেও কোনো পয়েন্ট অর্জন হয়নি প্রোটিয়াদের। পুরনো বিষয়গুলো টেনে এনে বাউচার বলেন, ‘আমি এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, যাদের আরও বেশ কিছু কঠিন সময় পার হয়েছে। বিশেষ করে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের সেই ঘটনার (ফিক্সিং কেলেঙ্কারি) সময়টা। এরপরও আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিলাম (২০০০ সালের এপ্রিলে ক্রোনিয়ের ফিক্সিং কেলেঙ্কারির ঘটনা স্বীকারের পর অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল প্রোটিয়ারা)।’
সে সব ঘটনা স্মরণ করে বাউচার বলেন, ‘আমার মনে হয়, খারাপ সময় পেছনে ফেলে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় অর্জন করা প্রয়োজন আমাদের। খেলাধুলা সত্যিই একটা বড় বিষয়। এখানে হয়তো কিছুদিন খারাপ যেতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস, প্রচুর পরিমাণে কাজ করতে পারলে, ভালো কিছু করা সম্ভব।’
আইএইচএস/এমএস