রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আমানতদার। তাঁর কাছে শুধু মুসলিমরাই সম্পদ আমানত রাখেনি বরং অমুসলিম অবিশ্বাসীরাও তার কাছে আমানত রাখতেন।
Advertisement
তিনি শুধু মানুষের সম্পদের আমানতদারই ছিলেন না তিনি ছিলেন আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থারও আমানতদার। তাইতো তিনি আল-আমিন বা বিশ্বাসী।
অন্যদিকে আমানতের খেয়ানত করা মুনাফেকের অন্যতম চরিত্র। কোনো ব্যক্তি যদি কারো আমানতের খেয়ানত করে তবে সে ঈমানহীন হয়ে পড়ে। এ কারণেই আমানতের খেয়ানত করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
বর্তমান সময়ে আমানতের খেয়ানত মহামারী আকারে বেড়ে চলেছে। এ খেয়ানত মানুষকে মুনাফেকে পরিণত করছে। মুনাফেকদের ব্যাপারে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সতর্ক করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-‘হে নবি! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন করুন। আর তাদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা তাওবা : আয়াত ৭৩)
Advertisement
আল্লাহ তাআলা আমানতের খেয়ানতকারী মুনাফিকদের পরকালীন অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করবে। (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৫)
আমানতের হেফাজত করতে আল্লাহ তাআলা কুরআন এবং হাদিসে মুমিন বান্দার জন্য নসিহত পেশ করা হয়েছে। এ চরিত্রের লোকদের ব্যাপারে কুরআন এবং হাদিসে এসেছে মারাত্মক সতর্কতা। যারা আমানতের খেয়ানতকারীর চরিত্রে অভ্যস্ত তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ঘোষণা-
'নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতগুলো তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে।' (সুরা নিসা : আয়াত ৫৮)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে, তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করেছে, তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না।’ (আবু দাউদ)
Advertisement
যারা আমানতের খেয়ানত করে না তারা দুনিয়াতে যেমন সম্মানিত, পরকালেও তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আমানতদার। ফলে তিনি দুনিয়ার সব শ্রেণির মানুষের কাছে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী বলে পরিচিত ছিলেন। আমানতদারের মর্যাদা ঘোষণায় হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একজন সত্যবাদী ও আমানতদার ব্যবসায়ী আখেরাতে নবি-সিদ্দিক এবং শহীদদের সঙ্গে থাকবেন।’ (তিরমিজি)
কুরআন সুন্নাহর আলোকে বোঝা যায় যে, কোনোভাবেই আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। যার যার আমানত তাকে যথাযথ ফিরিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমানতের খেয়ানত করা মুনাফেকি। হাদিসে মুনাফেকির পরিচয় এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে সে সুস্পষ্ট মুনাফিক। আর যার মধ্যে এ স্বভাবগুলোর কোনো একটি থাকে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকির একটি স্বভাব থেকে যায়। আর তাহলো-- তার কাছে কেউ কোনো আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে।- সে কথা বললে মিথ্যা বলে।- ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং- ঝগড়া করলে গাল-মন্দ করে। (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
অন্য হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুনাফেকের আলামত ৩টি-- যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে।- ওয়াদা করলে বরখেলাপ করে এবং- আমানত রাখলে এতে খেয়ানত করে।’ (মিশকাত)
আমানতের খেয়ানতকারী মারাত্মক অপরাধী। হাদিসে আমানতের খেয়ানতকারকে ঈমানহীন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই, তার ঈমানও নেই। আর যে ওয়াদা পালন করে না তার মধ্যে দ্বীন নেই।’ (মুসনাদে আহামদ)
হাদিসে ঘোষিত দুটি গুণের খেলাপকারীই মুনাফিক, যা কোনোভাবে কোনো মুমিন বান্দার জন্য কাম্য নয়।
মুমিন বান্দার উচিত আমানতের হেফাজত করা। আমানতদারিতার উত্তম গুণে নিজেকে গুণান্বিত করা। বান্দাসহ আল্লাহর দেয়া সব আমানতের হেফাজত করা। আমানতের হেফাজত করে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আমানতের হেফাজত করে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস