স্বাস্থ্য

হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে প্রথমেই ধূমপান ছাড়তে হবে : ডা. সাঈদ রানা

ভারতের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সাইন্সের কার্ডিওলজি বিভাগ এবং কলকাতা নারায়ণ হেলথের চিকিৎসক ডা. সাঈদ রানা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে হৃদরোগবিষয়ক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম না করা, তামাকজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার এবং দুশ্চিন্তা হৃদরোগের অন্যতম কারণ। তবে হৃদরোগ এড়াতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডায় বিটিআই প্রিমিয়াম প্লাজায় স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়ক ‘লাইফ স্টাইল ম্যানেজমেন্ট ফর হেলদি হার্ট’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারটিতে কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপে কর্মরতদের জন্য স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়ক এই সেমিনারের আয়োজন করে সান হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন।

ডা. সাঈদ রানা বলেন, একটু সচেতনতা, নিয়ন্ত্রিত জীবন, খাদ্যাভ্যাসের সামান্য পরিবর্তনই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। ধূমপানসহ তামাকজাত পণ্য পরিহার, কায়িক পরিশ্রম বাড়ানো, ফাস্টফুড পরিহার, পোড়া তেলে ব্যবহারী জিনিস না খাওয়া এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।

তিনি বলেন, সাধারণত হার্টের রক্তনালীতে ব্লকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক দুঃশ্চিন্তা, রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলস্টেরল থেকে এমন সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে এবং যাদের বয়স বেশি তাদের ডাক্তারের কাছ থেকে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে অনেকেই ‍হৃদরোগে আক্রান্ত হন। রক্তের গ্লুকোজ যদি সঠিকভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা দেয়া না হয় তাহলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই হার্টের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।

Advertisement

স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়ক সেমিনারে অংশ নেয়া প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কর্মরতরা ডা. সাঈদ রানাকে এ সময় হৃদরোগবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। উত্তরে ডা. সাঈদ রানা বলেন, খাবারের বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। রেডমিট বা শর্করা, চর্বিজাতীয় খাবার কম খেতে হবে। আর আমিষের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। হাঁটতে হবে পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ, ওজননিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপ এবং সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ব্যায়াম করার সুযোগ না থাকলেও ঘরে ব্যায়ামের উপকরণ যন্ত্র দিয়ে সাইকেলিং করা যেতে পারে।

সেমিনারে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরারা অংশ নেন।

সেমিনার শেষে জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় চিকিৎসক ডা. সাঈদ রানা বলেন, হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে হলে একজন সচেতন মানুষকে প্রথমেই ধূমপান ছাড়তে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, হাইপার টেনশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, সবার উদ্দেশে বলতে চাই- নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন হন। মানুষের যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো রোগ হচ্ছে বা স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হচ্ছে ততক্ষণ মানুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। কিন্তু এটা ঠিক না, নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত এবং ভালো থাকার জন্য স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। তাহলেই রোগ হবে না। কিন্তু আমরা কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরই কেবল নিয়ম পালন করতে উদ্বুদ্ধ হই।

Advertisement

ডা. সাঈদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যগত বিষয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সচেতনতার অনেক অভাব রয়েছে। একজন ৪০ বছর বয়সী মানুষকে যদি বলা হয় আপনি স্বাস্থ্যপরীক্ষা করুন, একটি টেস্ট করুন, ইটিটি টেস্ট করুন তাহলে বেশির ভাগ জনই হয়তোবা তা শুনবে না। এটা আমাদের অনেক বড় সমস্যা। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে কেউ সচেতন হতে চান না।

তিনি বলেন, আমরা ফাস্টফুড, রিচফুড, রেডমিট, সল্ট খেয়েই যাচ্ছি। ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিস আমাদের অনেক কমে গেছে, এছাড়া খেলার মাঠের সংখ্যা কম, বায়ুদূষণ সব মিলিয়ে আমার কিন্তু মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে যাচ্ছি। আমরা কী খাচ্ছি? রান্নার তেল কীভাবে ব্যবহার করছি, দৈনন্দিন জীবনে পরিশ্রম, কায়িক শ্রম, ব্যায়াম করছি কিনা তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এএস/বিএ