আগামী বছর থেকে দেশটির নতুন আইনে পর্যটন, শিল্প ও লজিস্টিক খাতগুলোকে ওমানীকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন এই আইনে স্থানীয়দের আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১০-ডিসেম্বর) ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
Advertisement
নতুন এই আইনে আগামী ২০২০ সালে, ভ্রমণ ও পর্যটন খাতকে ৪৪.১ শতাংশ, লজিস্টিক খাত ২০ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ৩৫ শতাংশ ওমানীকরণ করা হবে। এতে প্রবাসীদের জন্য কাজের কোটা কমে আসবে।
দেশটির অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। ওমানের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের জন্য তানফীদ পরিকল্পনার আওতায় উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এই খাতগুলো প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে সরকার এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণে চাকরিগুলোতে ওমানীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভ্রমণ ও পর্যটন, লজিস্টিক ও শিল্প খাতে বিশেষায়িত সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা ও কর্মসংস্থান প্রদান করব। আমরা প্রবাসী কর্মীদের জন্য কিছু পেশায় অস্থায়ী কাজের লাইসেন্স প্রদান করব, তবে তা ওমানীদের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি হবে না।
Advertisement
এদিকে, নতুন এই আইন অমান্যকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মোটা অংকের জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে প্রথমে ৩০ দিন কোনো জরিমানা করা হবে না বলেও জানানো হয়েছে। কোনো কোম্পানি যদি এক মাসের অধিক নতুন এই আইন অমান্য করে, তাহলে দেশটির শ্রম আইনের ১১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটির পর্যটন খাতে ওমানীকরণের হার ছিল ৪১.১ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৪২.২ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৩.১ শতাংশ এবং আগামী ২০২০ সালে এসে এর পরিমাণ এক শতাংশ বেড়ে ৪৪.১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
সেইসাথে লজিস্টিক সেক্টরে ২০১৭ সালে ওমানীকরণ ছিল ১৪ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১৬ শতাংশ, ২০১৯ সালে ১৮ শতাংশ এবং আগামী ২০২০ সালে দুই শতাংশ বেড়ে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ২০ শতাংশ।
এদিকে দেশটির শিল্পখাতে ২০১৭ সালে ৩২. ৫ শতাংশ ছিল, ২০১৮ সালে ৩৩ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৩৪ শতাংশ এবং আগামী ২০২০ সালে এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ শতাংশ।
Advertisement
দেশটির এমন ওমানীকরণ নীতির জন্য দিনেদিনে কমে আসছে প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র। চলতি বছরে প্রায় ৯০টি পেশায় ওমানীকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত ধরপাকড় ও নানা নিয়ম-নীতির কারণে দিনেদিনে ওমান ছাড়ছেন অনেক প্রবাসী।
ওমানের জাতীয় পরিসংখ্যান ও তথ্য কেন্দ্রের (এনসিএসআই) তথ্য অনুযায়ী ওমান থেকে গত এক বছরে অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে ১৭ শতাংশ। সূত্রের হিসাব অনুযায়ী গত এক বছরে ৭০ হাজার ৭৮১ জন অভিবাসী ওমান থেকে তাদের নিজ দেশে চলে গেছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ওমানে সবমিলিয়ে অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৯৭৫ জন, আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩০ হাজার ১৯৪ জন। যার অর্থ, গত এক বছরে ওমান ছেড়েছেন ৭০ হাজার ৭৮১ জন। ওমানে গত দুই বছরে নির্মাণ খাতে কর্মরত মোট প্রবাসীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে দেশটির সরকার এমন ওমানীকরণ নীতিতে ঝুঁকছে।
এমআরএম/এমকেএইচ