বহুল প্রত্যাশার পর স্থানীয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বিআরটিসির ১০টি দ্বিতল বাস চলাচল উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এর চার ঘণ্টা পরই বেলা ১টা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয় বেসরকারি বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতা-কর্মীরা।
Advertisement
এরপরর তারা হঠাৎ করে উল্টো পরিবহন ধর্মঘট ডেকে ময়মনসিংহ বিভাগে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখে। এরপর প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে সভা করে একদিন পর ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেও বিআরটিসির দ্বিতল বাসগুলোকে এখনও চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। এতে করে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা প্রশাসন ও বাস পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনা শহরের নাগড়া কৃষিফার্ম এলাকায় থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বিআরটিসির দ্বিতল সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের স্থানীয় এমপি ও জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা রহমান খান এ বাসসার্ভিস উদ্বোধন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়াসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু উদ্বোধনের পর পরই বেসরকারি বাস পরিবহন শ্রমিকরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিআরটিসির বাস চলাচলে বাধা দেয়া শুরু করে। চার ঘণ্টা পর দুপুর একটার দিকে বাসগুলোর চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পৌরসভার সামনের সড়কে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
Advertisement
এদিকে মানববন্ধন ও সমাবেশের পর ওই দিন বিকেল তিনটার দিকে নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ সব দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে জেলা বাস মালিক সমিতি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন দূরপাল্লর যাত্রীরা।
প্রতিদিন নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এর মধ্যে নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহে মহুয়া সার্ভিস নামে ১১০টি ও নেত্র নামে আর ৮০টি বাস চলাচল করে। প্রতি ১৫ মিনিট পর পর ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত বাসগুলো চলে। প্রতিটি বাসে ৪৫টি করে আসন রয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় গ্রিনল্যান্ড, শাহজালাল, ইকরা, নেত্র, মায়ের দোয়সহ আরও অন্তত দুই শতাধিক বাস চলাচল করে।
প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় সভার পর অবশেষে গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ৮টা থেকে ধর্মঘট প্রত্যার করা হয়। এরপর বুধবার সকাল থেকে নেত্রকোনা আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় সব রুটের বাস। তবে বিআরটিসির দ্বিতল বাস এখনও চলতে দেয়া হচ্ছে না। এতে জেলাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের বিরূপ মন্তব্য করছেন। নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহগামী লক্কড়ঝক্কড় মার্কা সার্ভিসের দুর্ভোগ রয়েই গেল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুরাতন এসব বাসে শিশু ও নারীদের উঠতে খুব কষ্ট হয়। পুরুষদেরও চলতে হয় কুঁজো হয়ে। অধিকাংশ বাসেরই নেই ফিটনেস। বেশিরভাগ চালকই অদক্ষ। ৩৮ কিলোমিটার এই পথ যেতে ভাড়া দিতে হয় ৫৫ টাকা করে। অথচ বিআরটিসির দ্বিতল সিটগুলো যেমন আরামদায়ক, তেমনি ভাড়াও কম, মাত্র ৪০ টাকা।
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিসি কাউন্টারের একজন জানান, আপাতত দ্বিতল বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে বিআরটিসির পাঁচটি সাধারণ বাস (দ্বিতল নয়) চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ‘বিআরটিসি বাস চলাচলের জন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান মিলবে।’
জেলা বাস পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ খান বলেন, ‘ময়মনসিংহ বিভাগীয় নেতারাও এনিয়ে সেখানকার প্রশাসনের আলোচনায় বসছেন। হয়তো দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে।’
কামাল হোসাইন/এমএমজেড/জেআইএম