কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন থেকে সরবেন না দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলের শ্রমিকরা। মরতে হলে মিল গেটেই মরতে চান বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা।
Advertisement
এদিকে অনশন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শ্রমিক প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছেন। খুলনা ও রাজশাহীতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েক জন শ্রমিককে স্থানীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্রমেই এ সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
খুলনার খালিশপুর (সাবেক পিপলস) জুট মিলের শ্রমিক ওবায়েদ, ফরিদুল, মিনা আজিজসহ আরও কয়েকজন জানান, মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়সহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের অন্যান্য স্থানের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে তারা এ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
কর্মসূচির পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পর বুধবার দিবাগত রাতে খুলনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান পাটকল সিবিএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কিন্তু সেখানে তিনি ভালো কোনো খবর দিতে পারেননি। বলেছেন, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু শ্রমিকরা গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চরম অবহেলার মধ্যে দিয়ে মিলের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু শ্রমের মজুরি পাচ্ছেন না।
Advertisement
আলিম জুট মিলের অস্থায়ী শ্রমিক সহিদুর রহমান, মুমতাছির, জুনায়েদরা জানান, ঠিক মত মজুরি না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ রাখে না। বাধ্য হয়েই অনশন শুরু করেছেন। ন্যায্য দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না।
আমরণ অনশন করছেন ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, দৌলতপুর, প্লাটিনাম জুবিলি, স্টার, আলিম, ইস্টার্ন, কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকরা। তারা জানান, শ্রমিকরা নিজেদের কাঁথা-কম্বল নিয়ে অনশনে নেমেছেন। সমস্যার সমাধান করতে যদি মরতে হয়, তবুও দাবি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা ঘরে ফিরবে না, অনশন চলবে।
তারা আরও জানান, দাবি আদায় না হলে তাদের পর আর কেউ জুট মিলে কাজ করতে আসবে না। মিলগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। এই মিলগুলো জাতীয় সম্পদ, এগুলো রক্ষা করার জন্যও আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সোহরাব হোসেন জানান, খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড শীতে এবং ৩৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অনাহারে থাকায়েএরই মধ্যে শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি শ্রমিককে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বাকিদের অনশন স্থানে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় পাট মন্ত্রণালয়ে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিকদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য বুধবার (১১ পিসেম্বর) রাতে ওই দিন পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান জানান, বুধবার বিকেলে খুলনা সিটি কর্পোরেশেনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিসে এবং রাতে নিজের বাড়িতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে দু’দফা বৈঠকে এই অনুরোধ করেন তিনি। সেখানে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করার প্রস্তাব দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
এই শ্রমিক নেতা জানান, বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী) বলেছেন, ১৫ তারিখ ঢাকার মিটিংয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণ হবে। কিন্তু শ্রমিক নেতারা মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
এদিকে অনশন কর্মসূচির কারণে পাটকলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে বিআইডিসি রোডের সব দোকান-পাটও বন্ধ রয়েছে। পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে পড়েছে। অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চলে।
উল্লেখ্য, ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। গত ২৫ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আমরণ অনশন।
আলমগীর হান্নান/এমএমজেড/জেআইএম