ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান নাম পদ্মা ব্যাংক) নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতি ওরফে বাবুল চিশতীসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের ১৩৫ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
Advertisement
ফারমার্স ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনায় এর আগে ৭টি মামলা করেছে দুদক। সবগুলো মামলাতেই মাহবুবুল হক চিশতীকে আসামি করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল প্রথম মামলা করার পর দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন চিশতী।
দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেছেন, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) কমিশন তাদের (চিশতী পরিবারের পাঁচ সদস্য) বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল এসব মামলা দায়ের করবেন।
দুদক জানিয়েছে, সবগুলো মামলাতেই আসামি হচ্ছেন মাহবুবুল হক চিশতী। আর চিশতির ছেলে রাশেদুল হক আসামি হচ্ছেন দুই মামলায়। এছাড়া চিশতির স্ত্রী রোজী চিশতী, মেয়ে রিমি চিশতী ও পুত্রবধূ ফারহানা আহমেদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।
Advertisement
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দুদকের অনুসন্ধানে ওই পরিবারের পাঁচ সদস্যের নামে মোট ১৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বাবুল চিশতীর নামে ২৮ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার, রোজী চিশতীর নামে ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ, রাশেদুল হক চিশতির নামে ৩২ কোটি ৬৮ লাখ, ফারহানা আহমেদের নামে ১৫ কোটি ৬২ লাখ এবং রিমি চিশতীর নামে ২১ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর আগে বাবুল চিশতির শ্যালক মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ৮৪ লাখ ৭২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ২ কোটি ৫২ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলার পরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ফারমার্স ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনা ২০১৭ সাল থেকে অনুসন্ধান করছে দুদক। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিলে করা মামলায় অভিযোগপত্রও দিয়েছে সংস্থাটি। এতে মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) তার স্ত্রী রোজী চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, ফারমার্স ব্যাংকের চাকরিচ্যুত এসভিপি জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও চাকরিচ্যুত ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান খানের নাম রয়েছে।
মামলার এজাহারে ৬ জনকে আসামি করা হলেও তদন্তে ব্যাংকের গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেনের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়।
Advertisement
ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা তুলে নেয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে করা যে মামলায় সম্প্রতি অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে তাতেও চিশতীকে আসামি করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, তাদের অনুসন্ধানে নথিপত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনও পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের ঋণের ভাগ নিয়েছেন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী। এর মাধ্যমে দু’জনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে এবং তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক যাত্রা শুরুর পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। আস্থার সঙ্কটে আমানতকারীদের অর্থ তোলার চাপ বাড়ে। পরিস্থিতির অবনতি হলে পদ ছাড়তে বাধ্য হন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতী।
এফএইচ/আরএস/জেআইএম