শুরুতে বিচারকদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা ও ভালোবাসা দেখে সব বিচারকের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তিনি একদিকে যেমন বিচার বিভাগের কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তেমনি বিচারকদের নানা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং সুবিধা-অসুবিধার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নের আশ্বাসও দিয়েছেন।
Advertisement
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচারকদের তথা বিচার বিভাগ ও তার উন্নয়ন নিয়ে কি কি চিন্তা ও ভাবনা পোষণ করেন তা বোঝার জন্য গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় যেসব কথা বলেন, তার কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
বিচার বিভাগের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছিল, বিচার বিভাগ সেই অবৈধ সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে। এ সাহসী ভূমিকার জন্য বিচার বিভাগকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সবারই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রাষ্ট্র পরিচালনায় আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সব নাগরিক যাতে আইগত সহায়তা পায় সেজন্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা- ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, নুসরাত (ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী) হত্যাসহ অনেক মামলার রায় দ্রুত ঘোষণায় আমি মনে করি বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।
Advertisement
জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন, ২০১৯ এর প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বিচারকদের জন্য একটি দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়া গেছে। তিনি ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে গাড়ির জন্য ঋণ দিচ্ছি, সেদিক থেকেও আমাদের একটা সিদ্ধান্ত আছে, আমরা মনে করছি গাড়ি ঋণ নগদায়নের যে বিষয়টা, সেটা জুডিসিয়ারির জন্য অর্থাৎ বিচার বিভাগের জন্য আমরা করে দেব। কারণ আমি মনে করি বিচারকদের জন্য এটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
বিচারকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় চিন্তিত থাকি যে, আপনারা এ রকম বিভিন্ন সন্ত্রাসী বা বিভিন্ন অপরাধীদের বিচার করেন, রায় দেন। কাজেই আপনাদের নিরাপত্তা, ভালো থাকার ব্যবস্থা করা, যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা অবশ্যই সরকারের কর্তব্য। কাজেই এজন্য যা করণীয় সেটা অবশ্যই আমরা করব।’
জাতির পিতার হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে অনেক বাধা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাধা সত্ত্বেও আমরা এসব মামলার বিচার করতে সক্ষম হয়েছি।’ সন্ত্রাসীদের হামলায় দুজন বিচারক নিহতের ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বিচারকদের নিরাপত্তা সবার আগে দরকার। এজন্য আমরা বিচারকদের আবাসন ও গাড়ি সুবিধা বৃদ্ধি করেছি। বিচারকদের আবাসন ব্যবস্থা একটু ভিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, বসে চিন্তা করার মতো জায়গা রাখা হয়েছে। এছাড়া বিচার বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে বাজেটে পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিচারকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নতুন ভাতা চালু করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ধারাবাহিকতায় বিচার বিভাগেও ই-জুডিশিয়ারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখার পাশাপাশি বাংলায়ও রায় লেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ ইংরেজি না জানার কারণে রায়ে কি বলা হয়েছে তা অনেকেই জানতে পারেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে বিচারকদের এজলাসে বসার জায়গা ছিল না। আমরা এনেক্স ভবন তৈরি করে দিয়েছি। সারাদেশে আরও বেশি বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ নারী বিচারক নিয়োগের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে আগে নারী বিচারক ছিলেন না। আমাদের সময়ে হাইকোর্টে প্রথম বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, একটি দেশের উন্নয়নে নারী-পুরুষ সবার ভূমিকা থাকা দরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। খুনিকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করা হয়েছিল। হত্যাকারীদের নানাভাবে মদদ দেওয়া হয়েছিল। হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি বিল জারি করা হয়। আমরা যারা ভুক্তভোগী ছিলাম, আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ ছিল না। সে সময় দেশে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে- এমন অবস্থা ছিল। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে আর কেউ বছরের পর বছর অতিবাহিত করুক আমরা তা চাই না।’
Advertisement
বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তা এখন বলতেই পারি। এখন অনেকেই হয়তো প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব-নিকেশ করছেন। এ স্ হিসাব-নিকেশ করার পূর্বেই যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে জাতীয় বিভাগীয় সম্মেলন সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন সারা দেশের বিচারকদের মিলনমেলা। যেটি প্রতি বছরই অব্যাহত থাকবে তা আশা করছি। এটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা, বিচার বিভাগকে তার উন্নয়নের জন্য প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রাম করতে হয়। নানা প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি বিচার বিভাগকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। তাই বিচার বিভাগের উন্নয়নের গতিও মন্থর। হয়তো প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হয় ফল প্রাপ্তির জন্য! তবে আমরা আশাবাদী বর্তমান সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়েই বিচার বিভাগে সময়ের সাথে ও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক উন্নয়ন সাধন হয়েছে এবং আরো হবে। এ ক্ষেত্রেও সেই পুরনো প্রবাদেই ফিরে যেতে হয়, ‘রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে।’
এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, সম্মেলনে প্রধান অতিথির কিছু বক্তব্যে হয়তো সব বিচারক সমানভাবে খুশি হতে পারেননি। সবাইকে একসাথে খুশি করতে না পারাটাই স্বাভাবিক। পরে চিন্তা করে দেখলাম, যতটা হতাশ শুরুতে হয়েছি পরিস্থিতি এখনই ততোটা হয়তো খারাপ নয়।
সত্যি কথা হলো, সরকার ভাতা-সুবিধার ক্ষেত্রে কয়েকটি ভাতা ফিক্সড করে দিয়েছে। হয়তো এটি সরকারের পলিসি। তবে জুডিসিয়াল ভাতার বিষয়টি নিঃসন্দেহে আলাদা! মূল বেতনের ৩০ শতাংশ জুডিসিয়াল ভাতা আমরা মাজদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের আদেশ থেকে প্রাপ্ত হয়েছি।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-কমিশনের ১৩/০৪/২০০৮ তারিখের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন এবং ০২/০৬/২০০৯ তারিখের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন অনুযায়ী মূল বেতনের শতভাগ জুডিসিয়াল ভাতা প্রদানের সুপারিশ করা হয়। তবে ২০১৫ সালের বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলে ঘোষিত হয় ৩০ শতাংশ জুডিসিয়াল ভাতা ২০১৫ এর পূর্বের মূল বেতনের ওপর নির্ধারণ করা হবে। এই বিষয়টি সরকার সমালোচনা এড়াতে পরিবর্তন করতে পারে।
দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে, ২জি, ৩জি, ৪জি থেকে ৫জি এর দিকে ধাবমান এবং ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত, তখন সামান্য ৩০ শতাংশ জুডিসিয়াল ভাতা নির্ধারণে বর্তমান সময় থেকে পাঁচ বছর পিছনে যেতে হবে বা হয়- তার কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা আছে কিনা তা আমার জানা নেই।
মহামান্য আপিল বিভাগ ২৮/০২/২০১০ তারিখের আদেশে পে-কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে সরকারের পক্ষ থেকে বাজেট স্বল্পতার বিষয়টি উল্লেখপূর্বক বেতন-ভাতা সংক্রান্ত কিছু বিষয় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলে ১৪/০৩/২০১৩ তারিখে মূল বেতনের ৩০ শতাংশ জুডিসিয়াল ভাতা নির্ধারণ করার আদেশ প্রদান করেন আপিল বিভাগ।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সে ময়কার আদেশ প্রদানকারী বিচারকদের অন্যতম একজন। ফলে জুডিসিয়াল ভাতাকে সরকারের অন্য ভাতার সঙ্গে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। এটি মাজদার হোসেন মামলায় শুনানির প্রেক্ষিতে সরকারের পুনর্বিবেচনার আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আপিল বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত ভাতা। এই বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর নিকট সঠিকভাবে উপস্থাপন করা জরুরি।
উৎসাহের ব্যাপার এই যে, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে অতিথি হিসেবে পেয়েছি। তিনি তার বক্তৃতায় বিচার বিভাগের বেশকিছু বিষয়ের উদাত্ত প্রশংসা করেছেন। এটি ভীষণ ইতিবাচক।
সুক্ষভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিচার বিভাগের মৌলিক দাবি আদতে খুব বেশি নয়, বড়জোর ৯-১০টির মতো হবে বা আরো দু-একটি বেশি হয়তো হবে। প্রতি বছর সম্মেলনে যদি ১-২টি করে দাবিও আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলেও আগামী ৭-৮ বছরে জুডিসিয়াল সার্ভিসের অবকাঠামোগত ও গুণগত অনেক পরিবর্তন আসবে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
প্রধানমন্ত্রী যেহেতু তার বক্তব্যে বিচারকদের গাড়ি নগদায়নের সুবিধা প্রদান করবেন মর্মে উল্লেখ করেছেন, তাই আমাদের কর্তৃপক্ষের উচিত হবে দ্রুত এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে বিচারকদের জন্য গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধা বাস্তবায়ন করা। এ ক্ষেত্রে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার বিচারকদের এই সুবিধার আওতায় আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নিজে থেকেই বলেছেন, ‘বিচারকদের যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা অবশ্যই সরকারের কর্তব্য’ এবং তার জন্য যা করণীয় তা তিনি করবেন, তাই এই বিষয়টিকে আমাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে হবে। জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। সিনিয়র সহকারি জজ/সহকারি জজদের জন্য স্বল্প সুদে গাড়ি ঋণসুবিধা প্রদানপূর্বক ১৫০ লিটার পর্যন্ত তেলসুবিধা প্রদান করা যায় কিনা সে ব্যাপারে চেষ্টা করতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচারকদের ভালো থাকার ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেছেন। এই বিষয়টিকেও আমাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে হবে। প্রতি জেলায় জুডিসিয়াল কমপ্লেক্স স্থাপনের ব্যাপারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ভার্চুয়াল কোর্ট স্থাপনের কথা বলেছেন। এ ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া যায়। তার আগে অ্যাকচুয়াল কোর্ট যেটি আছে, তাকে সাবলম্বী করতে হবে। তা না হলে ভার্চুয়াল কোর্ট এর উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হবে না।
আপীল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি নূরুজ্জামান মহোদয় বিচারকদের জন্য রেস্টহাউজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন এবং মাননীয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মহোদয় জেলায় জেলায় বিচারকদের থাকার ভবন স্থাপনের কথা বলেছেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ও বিচারকদের রেস্টহাউজের ব্যাপারে ইতিবাচক বক্তব্য প্রদান করেছেন। এই ব্যাপারে আমাদের লেগে থেকে দাবী আদায় করতে হবে।
হতাশা নয় বরং ন্যায্য প্রত্যাশা ও দাবী আদায়ের জন্য লেগে থেকে সফল হওয়া অনেক উত্তম, হোক তা কচ্ছপ গতিতে। আমার কেন জানি মনে হয় বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক দাবিগুলো আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভালোভাবে বোঝাতে পারিনি। তার আবেগ তৈরি করতে পারিনি। খুব ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি তাকে। ভীষণ আবেগী আর হৃদয়বান মানুষ তিনি। দেশের কল্যাণে সব করতে পারেন।
শুধু একবার ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেই হয়। পদ্মাসেতুর মতো কাজ যিনি করতে পারেন, তার মনের বিশালতা পদ্মার মতোই বিশাল। একবার সাবেক এক সচিব তাকে বোঝাতে সক্ষম হলেন, ২৬,০০০ বিদ্যালয় সরকারি করলে দেশের এই লাভ হবে, এতে সরকারের এত টাকা খরচ হবে, এইভাবে টাকার ব্যবস্থা করা যাবে। তিনি সাথে সাথেই রাজি হলেন। ব্যাস্, হয়ে গেলো।
মেট্রোরেলের মতো হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ, রূপপুর পারমাণবিক পাওয়ার প্লান্টের মতো মেগা প্রজেক্ট যিনি করতে পারেন। মহাকাশে স্যাটেলাইট যিনি পাঠাতে পারেন, তিনি হাতেগোনা এই কয়জন বিচারকের বিচারিক ভাতার এই কয়টা টাকা দিতে পারেন না?
হয়তো কেউ তাঁকে বুঝিয়েছে বিচারকরা অনেক ভালো আছে, ওদের আর দেয়ার দরকার নাই। বাইরে থেকে আসলে বিচার বিভাগের কষ্টগুলো বোঝানো যাবে না। চাকরিতে আসার আগে আমরাও সমস্যাগুলো জানতাম না। তাকে যদি বোঝানো যেতো রাজধানীতে সব দপ্তর আর বিভাগের অগনিত ভবন বিল্ডিং আছে, মৎস্য বিভাগের হাজার হাজার পুকুর খালি আছে, প্রাণী দপ্তরের শত শত একর খামার আছে।
অথচ রাষ্ট্রের তিনটি অংগের একটি বিচার বিভাগ। সীমাহীন এই ঢাকা শহরে এই বিভাগের দু’বিঘা জমিও নাই যে একটা রেস্ট হাউস করা যায়! যদি বোঝানো যেতো, চাকুরির শুরু হতে কিভাবে একজন নির্বাহী অফিসার, একজন পুলিশ নিজস্ব গাড়ি পায় আর ২০জন জজ কিভাবে একটা গাড়িতে আসে, যায়! যদি বোঝানো যেত থানার ওসিরও রাইটার আছে, টাইপিস্ট আছে জজের থাকলে আরো বেশি রায় দেয়া যেত! নিজ হাতে রায় লেখার কষ্টের কথাগুলো যদি একটু আবেগ দিয়ে বোঝানো যেত!
কেন জানি মনে হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আবেগ দিয়ে কথাগুলো বলি! নিশ্চয়ই তিনি বুঝবেন। সাথে সাথে আমাদের বিচার বিভাগীয় সম্মেলন এবং জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনগুলোতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি হিসেবে নিয়মিত রাখতে পারলে সময়ের সাথে সাথে আমাদের প্রত্যাশা ও দাবী আদায় করা সহজতর হবে।
আইএইচএস/এমকেএইচ