জাতীয়

এক লাফে খরচ বাড়ল সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) প্রথম সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় এক লাফে ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। শতাংশের হিসাবে ৫৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যয় বাড়ানো হলো।

Advertisement

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদন করা হয়। মূল প্রকল্পে ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর পর আজ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হলো ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং জাপানের জাইকা ঋণ হিসেবে দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

এ প্রকল্পের আওতায় ভিভিআইপি টার্মিনালের সুবিধা সংযুক্তিসহ মূল টার্মিনাল ভবন-৩ এবং কার্গো কমপ্লেক্সের কাজের পরিধি পরিবর্তন ঘটেছে, উন্নত ভবন ব্যবস্থাপনা সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা, পৃথক পৃথক আমদানি-রফতানি ভবন নির্মাণ প্রস্তাব করা হয়েছে। ঠিকাদারের উদ্বৃত ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপির) সুপারিশ করা মূল্যের ভিত্তিতে আরডিডিপির (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। মূলত এসব কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে প্রকল্প সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারিত থাকলেও আজকের প্রথম সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

তবে গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ২১১ কোটি ৪২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয়ের ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। একই সময়ে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ।

‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়-প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে উদ্যোগে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বাস্তবায়ন করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানবন্দরটি সম্প্রসারণ, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যত বিমান পরিবহনের চাহিদা পূরণ এবং বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিকমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। আর এ প্রকল্পের আওতায় পৃথক ভিভিআইপি ভবন বাতিল করা হয়েছে।

Advertisement

এ প্রকল্পের আওতায় কেবিন এক্সরে মেশিন ৪০টি, বোর্ডিং ব্রিজ ১২টি, কনভেয়ার বেল্ট ১৬টি, বডি স্ক্যানার ১১টি কেনা হবে, টানেলসহ বহুতল বিশিষ্ট কারপার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার (১,২৩০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে), নতুন ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স এবং নতুন এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স ৬৩ হাজার বর্গমিটার, রেসকিউ ও ফায়ার ফাইটিং স্টেশন এবং ইক্যুইপমেন্ট ৪ হাজার বর্গমিটার, ভূমি উন্নয়ন, কানেক্টিং টেক্সিওয়ে (উত্তর) ২৪ হাজার বর্গামিটার, কানেক্টিং টেক্সিওয়ে (অন্যান্য) ৪২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, র‌্যাপিড এক্সিট টেক্সিওয়ে (উত্তর) ২২ হাজার বর্গামিটার, র‌্যাপিড এক্সিট টেক্সিওয়ে (দক্ষিণ) ১৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, সোল্ডার ৯৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার, জিএসই রোড ৮৩ হাজার ৮০০ বর্গমিটার, সার্ভিস রোড ৩৩ হাজার বর্গমিটার, ড্রেনেজ ওয়ার্কস (বক্স কালভার্ট ও প্রোটেক্টিভ ওয়ার্কস), বাউন্ডারি ওয়াল, সিকিউরিটি গেইট, গার্ড রুম ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, ল্যান্ড সাইড, সার্ভিস রোডসহ এলিভেটেড রোড, ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ইনটেক পাওয়ার প্ল্যান্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কার্গো কমপ্লেক্সের জন্য সিকিউরিটি ও টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট, এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম, হাইড্রেন্ট ফুয়েল সিস্টেম ইত্যাদিসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।

বেবিচক বলছে, দেশের প্রধান ও ব্যস্ততম এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্রমবর্ধমান যাত্রী চলাচল ও কার্গো পরিবহনের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ধাপে ধাপে দ্বিতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, বহুতল বিশিষ্ট কারপার্ক, ইমপোর্ট কার্গো ভবন নির্মাণ এবং বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিমানববন্দরে যাত্রী সংখ্যা ও কার্গো পরিবহনের রিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিশেন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, হযরত শাহজালালের যাত্রী সংখ্যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ হারে এবং কার্গো পরিবহন হার ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ ২০১৪ সালে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের মাস্টার প্লান প্রণয়ন ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি বিমানবন্দরটির সম্প্রসারণ ও অন্যান্য সুবিধাদি উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমীক্ষা করে। সমীক্ষা শেষে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরটির মাস্টারপ্ল্যান আপডেট এবং নতুন তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ অবকাঠামোর নকশা প্রণয়ন করে। বর্তমানে টার্মিনালের প্যাসেঞ্জার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি ৮ মিলিয়ন। এয়ার ট্রাফিকের বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় বিদ্যমান টার্মিনালটির যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালের ১৪ মিলিয়ন ও ২০৩৫ সালে ২৪ দশমিক ৮ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্রমবর্ধমান যাত্রী ও কার্গো পরিবহনের চাহিদা মেটানোর জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল, রানওয়ে, কার্গো সুবিধা প্রভৃতি আপগ্রেডেশন জরুরি। এরকম পরিপ্রেক্ষিতে বিমান পরিবহনের ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

পিডি/জেডএ/এমকেএইচ