বিনোদন

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন যারা

১৯২৭-২৮ সালে ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। নওয়াব পরিবারের কয়েকজন তরুণ সংস্কৃতিসেবী নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘সুকুমারী’। এর পরিচালক ছিলেন জগন্নাথ কলেজের তৎকালীন ক্রীড়াশিক্ষক অম্বুজপ্রসন্ন গুপ্ত। চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা ছিলেন খাজা নসরুল্লাহ ও সৈয়দ আবদুস সোবহান। কারণ তখন নারীদের অভিনয়ের রেওয়াজ চালু হয়নি। নাট্যমঞ্চের নারী চরিত্রেও পুরুষরাই অভিনয় করতেন।

Advertisement

সেই হিসেবে ‘সুকুমারী’ ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সিনেমা। দিন দিন এখানে সিনেমার ভিত শক্ত হয়েছে। পেশাদারিত্ব এসেছে আরও অনেক পড়ে। মূলত পঞ্চাশের দশকে সিনেমার বিকাশ ঘটে এখানে। তখন থেকে সিনেমা পেশা হিসেবেও জায়গা করে নেয়।

সিনেমার জন্য স্বীকৃতির শুরুটা হয় স্বাধীনতার পর, ‌১৯৭৫ সাল থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরাবরই ছিলেন সিনেমাবান্ধব একজন নেতা। তার হাত ধরেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের এফডিসি। তার আগ্রহেই চলচ্চিত্রের মানুষদের কাজের স্বীকৃতি দিতে চালু করা হয় ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ প্রথা।

এখন পর্যন্ত এটিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সর্বোচ্চ পুরস্কার। চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন বিভাগে এই পুরস্কার দেয়। প্রতি বছরই শিল্পীরা দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। এর আগে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারটি দেওয়া হতো না। ২০০৯ সালে এটি প্রথম চালু করা হয়।

Advertisement

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ ডিসেম্বর প্রদান করা হলো ২০১৭ (৪২তম) ও ২০১৮ (৪৩তম) সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এবার কৌতুক অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার জিতেও সেটি গ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে আলোচনার জন্ম দেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। তার দাবি, তিনি ‘কমলা রকেট’ ছবিতে কোনো কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করেননি। তাই এই চরিত্রের জন্য তাকে সেরা কৌতুক অভিনেতার পুরস্কার দেয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

৮ ডিসেম্বর তিনি পুরস্কার গ্রহণ করতে যাননি। বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে শোবিজ তথা চলচ্চিত্রপাড়ায়।

তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগে ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাবানাসহ আরও অনেকেই নানা কারণে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েও সেটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। ১৯৭৭ সালে তখনকার সুপারহিট নায়িকা শাবানাকে ‘জননী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দাবি করেন তার চরিত্রটি পার্শ্ব চরিত্র নয়। তিনি সেই স্বীকৃতি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। শাবানার মাধ্যমেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ না করার সংস্কৃতি চালু হয়।

এরপর ১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার পান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। কিন্তু তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। ১৯৮৩ সালে সুবর্ণা মুস্তাফা শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘নতুন বউ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। তিনিও শাবানার মতো পার্শ্ব চরিত্রে পুরস্কার ফিরিয়ে দেন। বলে রাখা ভালো, ‘গহীন বালুচর’ ছবিতে অভিনয় করে রুনা খানের সঙ্গে যৌথভাবে সেরা পার্শ্ব চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। সেটি তিনি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে।

Advertisement

১৯৯০ সালে মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফার দেখানো পথে হাঁটেন তার বাবা খ্যাতিমান অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা। সে বছর ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার দেওয়া হলেছিল এই গুণী অভিনেতাকে। কিন্তু পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬-এর বিজয়ীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের পর দেখা যায় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নিয়তি’ ছবির জন্য সেরা নৃত্য পরিচালক হিসেবে হাবিবের নাম উঠে আসে। হাবিব সে সময়ই দাবি করেন, এটা নাকি জালিয়াতি। ‘নিয়তি’ ছবিতে তিনি কাজই করেননি। তাই তিনি পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সে সময় অনেক সমালোচনা ও অভিযোগ উঠেছিল।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করার তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মোশাররফ করিম। ২০১৮ সালে ‘কমলা রকেট’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে সেরা কমেডিয়ান অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পান তিনি। তবে কমেডি চরিত্রের জন্য এই পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এলএ/জেআইএম