দেশজুড়ে

গানই যার জীবন জীবিকা

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের আনালেরতাড়ি গ্রামের বাউল গীতি কবি একরামুল হক লাল মিয়া। বাউল গানের জন্য নিবেদিত তৃণমূল পর্যায়ের একজন সংগীত প্রিয় ব্যক্তিত্ব। এই গান যার জীবন জীবিকা এবং সাধনার সিদ্ধি লাভের উপায়। তৃণমূল পর্যায়ে নিজ খেয়ালে যিনি নিজের লেখা গান, গীতি কবিতা লিখে সুর দিয়ে সংগীত পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করে সবার মনোরঞ্জনের পাশাপাশি ইতোমধ্যে মানুষের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি এই লাল মিয়া বাউল। তার বাউল গানের আধ্যাত্মিক গুরু ফরিদপুর জেলা শহরের চান্দ বয়াতী। ঢাকাস্থ মিরপুরে শাহ আলীর বাগদাদের (রহঃ) মাজারে ১৯৯৪ সালে এই চান্দ বয়াতীর সংস্পর্শে তিনি আসেন তার গানে আকৃষ্ট হয়ে। তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর। সেই থেকে চান্দ বয়াতীর শিষ্যত্ব লাভ করেই তার বাউল সংগীত সাধনার সূত্রপাত। তারপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকেই তিনি গান এবং গীতি কবিতা লিখতে শুরু করেন। নিজের লেখা গান নিজে সুর করেই তিনি পরিবেশন করে থাকেন পথে প্রান্তরে জনতার ভিড়ে। তার সঙ্গী শুধু একটি মাত্র দোতরা আর সাথে মন্দিরা হাতে তাজুল ইসলাম। এছাড়া অন্যান্য সময় বড় বড় অনুষ্ঠানে তার সাথে সংগীত পরিবেশনের সময় বাংলা ঢোল, খোল, হারমনিয়াম ও বাঁশের বাঁশি দিয়ে সহযোগিতা দেয়ার জন্যও রয়েছেন কয়েকজন শিল্পী। এদের নিয়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন লাল মিয়া বাউল। উল্লেখ্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চুক্তির ভিত্তিতেই সংগীত পরিবেশন করলেও তবে সেক্ষেত্রে আর্থিক প্রাপ্তিটাই মুখ্য নয়। বরং জনতার মাঝে সংগীত পরিবেশন করাই তার আসল উদ্দেশ্য।ইতোমধ্যে লাল মিয়া বাউলের ১০টি বাউল গান নিয়ে ‘নিদয়া মোর তিস্তা নদী’ নামে একটি অ্যালবামও বেড়িয়েছে। মাইজভান্ডারি তরিকার আধ্যাত্মিক মুরিদ এই গীতিকবি লাল মিয়া বাউল এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫শ বাউল, পল্লীগীতি ভাউয়াইয়া গান ও ২শ ৫০টি গীতিকবিতা রচনা করেছেন। মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শিখে এই সংগীত প্রিয় মানুষটি গান কবিতা লেখায় এতটাই দক্ষ যে, তিনি মুহূর্তেই একটি গান লিখে সুর করে তা জনসম্মুখে পরিবেশন করতে পারেন। দুই ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। যা নিয়ে তিনি ভাবেন না। কারণ বাউল গানের মাধ্যমে যে আধ্যাত্মিক সাধনায় তিনি নিবেদিতভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাতেই তার জীবন জীবিকার সাফল্য, মুক্তি সবই নির্ভর করছে বলে তিনি মনে করেন। বিশিষ্ট গীতিকার ও গবেষক আবু জাফর সাবু বলেন, বাউল গান আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম অনুসঙ্গ। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা হারিয়ে যেতে বসেছে। একরামুল হক লাল মিয়ার মতো শিল্পীদের সঠিক সহায়তা দানের মাধ্যমেই কেবল তা রক্ষা করা সম্ভব।অমিত দাশ/এমএএস/আরআইপি

Advertisement