সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। অগ্রহায়ণের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে কৃষক।
Advertisement
চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে বেশি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কৃষকরা। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রত্যেক চাষি বেশি মুনাফা লাভ করবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, শার্শা উপজেলা সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা গতবারের চেয়ে ২শ’ হেক্টর বেশি। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ১ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৯/১০, সরিষা-১৫, সোনালি সরিষা (এসএস-৭৫) ও স্থানীয় টরি-৭ আবাদ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত বেশি ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
Advertisement
উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের সরিষা চাষি নজরুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। বিঘাপ্রতি তার প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন বাম্পার ফলন হবে।
একই গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছেন। ফলন ভালো ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে অনেকেই ঝুঁকে পড়বেন।
উপজেলার ঘিবা গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। সরিষার জমিতে ধানের আবাদও ভালো হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উঠিয়ে আবার বোরো আবাদ করতে পারেন বলে একে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
Advertisement
মো. জামাল হোসেন/এসইউ/জেআইএম