রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কুরআনুল কারিমের সর্বশ্রেষ্ঠ ধারক বাহক ও প্রচারক ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। এদের মধ্যে অন্যতম কুরআন প্রেমিক সাহাবি হজরত সালিম মাওলা আবি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু। যার কাছে কুরআন শিখতে বলেছেন বিশ্বনবি।
Advertisement
জন্ম ও বেড়ে ওঠাহজরত সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু পারস্যে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি বন্দি হন। তাঁকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। হজরত সালিম ছিলেন হজরত আবু হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী সাবিতা বিনতে আয়ার (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর ক্রীতদাস।
তিনি পবিত্র নগরী মক্কায় বড় হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন উন্নত ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী। যে কারণে সাবিতা বিনতে আয়ার রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে মুক্ত করে দিয়ে ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
কুরআনুল কারিমে পালক পুত্রের ব্যাপারে আয়াত নাজিল হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সালিম বিন আবি হুজাইফা বলা হতো। পালক পুত্র নিজের পুত্র হয় না মর্মে আয়াত নাজিল হওয়ার পর থেকে তাকে সালিম মাওলা আবি হুজাইফা সম্বোধন করা হতো।
Advertisement
বিয়েহজরত আবু হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে আপন ভাইয়ের মেয়ে ফাতিমা বিনতে ওয়ালিদকে হজরত সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে বিয়ে দেন।
হজরত সালিম মাওলা আবু হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইসলামের প্রতি একনিষ্ঠ। তিনি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কুরআনের তেলাওয়াতহজরত সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু ক্রীতদাস থেকে কুরআনের অনুরাগী হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন জাদুকরি কণ্ঠের অধিকারী। তার সুন্দর ও সুললিত কণ্ঠের তেলাওয়াত ছিল প্রবাদতুল্য।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে যাদের কুরআনের সেবক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হজরত সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু। তার সুললিত কণ্ঠের তেলাওয়াতের ব্যাপারে এসেছে একাধিক হাদিস। হাদিসে এসেছে-
Advertisement
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে পড়ে গেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আয়েশা! তোমার কী হলো? উত্তরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয় মসজিদে এক ব্যক্তি রয়েছেন, আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর কেরাতের (তেলাওয়াত করতে আর) কাউকে দেখিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মসজিদে) গিয়ে দেখলেন তিনি আবু হুজাইফার মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস সালিম।’ (মুসনাদে আহমাদ)
কুরআনের প্রতি প্রবল আগ্রহ ও কুরআন অনুধাবনের জন্যই তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। কুরআন তেলাওয়াতের কারণে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বিশেষ মর্যাদা ও স্থান লাভ করেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে তাঁর কাছ থেকে কুরআন শেখার নির্দেশ দেন। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা চার ব্যক্তি থেকে কুরআন গ্রহণ করো—- আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ।- সালিম মাওলা আবি হুজাইফা।- মুয়াজ ইবনে জাবাল ও- উবাই বিন কাব।’ (বুখারি)
মসজিদে কুবার ইমাম নিয়োগকুরআনের প্রবল অনুরাগী হজরত সলিম মাওলা আবি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মদিনায় প্রথম নির্মিত মসজিদে কুবা-এর ইমাম ও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন বিশ্বনবি।শুধু মসজিদে কুবা-ই নয়, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের আগে মদিনার মুসলমানদের নামাজের ইমামতি করতেন হজরত সালিম মাওলা আবি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর কুবা নামক স্থানে মদিনার প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদের ইমাম ও শিক্ষক হিসেবে বিশ্বনবি তাকে নিয়োগ দেন। তিনি নামাজের ইমামতির পাশাপাশি মদিনার মুসলিমদের কুরআন শেখাতেন।
উল্লেখ্য যে, কুরআনের পাখি হজরত সালিম মাওলা আবু হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতামত আমিরুল মুমিনিন খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তখন তাকে বলা হয়, আপনি যদি আপনার উত্তরসূরি (পরবর্তী খলিফা) নির্বাচন করতেন! তবে কাকে নির্বাচন করতেন? তিনি উত্তরে দুই জনের কথা বলেন, যদি তারা জীবিত থাকতেন তবে তাঁদেরকে খলিফা নির্বাচন করতেন-
- হজরত আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ। এবং- হজরত সালিম মাওলা আবি হুজাইফা।
তিনি (হজরত ওমর) বলেন, ‘যদি আবু হুজাইফার মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম ‘সালিম’ জীবিত থাকতেন, তবে আমি তাঁকে অবশ্যই আমার উত্তরসূরি মনোনীত করতাম। আল্লাহ আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে বলতাম, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় সালিম আল্লাহকে অধিক পরিমাণে ভালোবাসে।
এ কারণে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার এক ছেলের নাম রাখেন সালিম। যেন তিনি হজরত সালিম মাওলা আবি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো হন।
যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও শাহাদাত লাভহজরত সালিম মাওলা আবি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। খেলাফতের প্রথম যুগে তিনি ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন।ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদাবরণকারী কুরআনের পাখি হজরত সালিম মাওলা আবি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত সালিম মাওলা আবি হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো কুরআনের অনুরাগী, কুরআন প্রেমিক ও কুরআনের খাদেম হিসেবে কবুল করুন। কুরআনের প্রচার ও প্রসারে নিজেদের আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ