জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’- পুরস্কার গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই পুরস্কার। বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘের এই পুরস্কার নিঃসন্দেহে এক বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিবেশ বিষয়ক কাজের স্বীকৃতিই শুধু এটি নয়- বরং এই পুরস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হবে- এমনটি আশা করা যায়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই বিরল সম্মান বনে আনায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী গত সোমবার ভোরে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক এখিম স্টেইনারের হাত থেকে ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কার গ্রহণের পর তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের অজেয় মনোভাব ও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বীকৃতি হচ্ছে এই পুরস্কার।’ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে এই পুরস্কার গ্রহণ করছেন বলেও মন্তব্য করেন। এই সময় তিনি জনসাধারণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন- ‘জনসাধারণের সমর্থন ছাড়া এই অর্জন পুরোপুরি অসম্ভব ছিল।’ বস্তুত জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনসম্পৃক্ততার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া- প্রধানমন্ত্রীর এই কথার মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত। সমুদ্র উপকূলবর্তী এই বঙ্গীয় বদ্বীপে ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, খরা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। প্রকৃতির এই রুদ্র রোষের মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষ টিকে থাকার লড়াইয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা শুধু এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলাই করছে না বরং এক অজেয় মানসিকতা নিয়ে এই সংকট উত্তরণের পন্থায়ও আবিষ্কার করছে। এরফলে খুব সহজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলও এখন বাংলাদেশের সংগ্রামমুখর মানুষের এই দৃঢ় মনোবলের কথা জানে। ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কার’- সেই কাজেরই স্বীকৃতি। এরমধ্যে দিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের স্বীকৃতির বিষয়টি যেমন প্রতষ্ঠিত হয়েছে তেমনি ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণেও আরও দায়িত্বশীলতার কথায়ও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এটি। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলো দক্ষভাবে মোকাবিলা করার আরও টেকসই কর্মকৌশলও নিতে হবে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তা মানুষের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির কারণে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এছাড়া পরিবেশ দূষণের আন্তর্জাতিক কারণগুলোর ব্যাপারে তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় কারণ গুলো নিয়েও ভাবতে হবে। আমাদের নদী-খাল-বিল-জলাশয় দখল হয়ে যাচ্ছে। পরিবহন-কলকারখানা-ইটভাটার কালো ধোঁয়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে বনভূমি। কৃষিজমির ওপরে যত্রতত্র গড়ে উঠছে স্থাপনা, ঘর-বাড়ি। পরিবেশের স্থায়ী ক্ষতি রোধ করতে হলে এসব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। এরফলে এ সংক্রান্ত আন্তজার্তিক পুরস্কারের বিষয়টি আরও অর্থবহ হবে। আমাদের লক্ষ্য হোক সেইদিকে। এইচআর/এমএস
Advertisement