বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন-২০১৫’র খসড়া পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় তাদের কাজ সম্পন্ন করে খসড়াকে চূড়ান্ত আইনে রূপ দিবে তা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পাস করার জন্য প্রেরণ করা হবে।চলতি বছরের ২৭ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৫’র খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত দুই মাস শিল্প মন্ত্রণালয় এই আইনের খসড়া নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে।শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইয়াসমিন সুলতানা জানান, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৫’র এর খসড়া কিছু সংশোধনীসহ পরীক্ষা করে তা আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিকাশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ বিশেষ করে জার্মান ও নেদারল্যান্ড গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অতি সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল শিল্পমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এই আগ্রহের কথা জানায়।বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য আইন না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ এই শিল্পে সহায়তার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে সরকার এই শিল্পের জন্য আইন করার উপর গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশ পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন বলেন, জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বার্থসংরক্ষণ, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের দূষণ রোধ করতে সরকার আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক হবে। পরিবেশ সম্মত কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য এই আইন খুবই প্রয়োজন। সীতাকুন্ডের জাহাজ ভাঙা শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কে এম শহীদুল্লাহ বলেন, এই আইন পাসের পর সরকার দেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পের উন্নয়নে একটি ‘জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ড’ গঠন করার মাধ্যমে এই শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমরা শ্রম আইনের অধীনে শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়ন চাই।তিনি বলেন, শ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার জাহাজ ভাঙা শিল্পের জন্য যে আইন করছে তাতে শ্রমিকদের স্বার্থ নিশ্চিত হতে হবে। এই শিল্পে কর্মরত বঞ্চিত শ্রমিকরা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার পায় তার জন্য শ্রম আইন বাস্তবায়ন জরুরি। গত ২৭ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাসকৃত খসড়া ওই আইনে, নিয়ম না মানলে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অনুমতি ছাড়া জাহাজ আমদানি, ইয়ার্ড নির্মাণ ও আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য জাহাজ আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। এছাড়া বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ইয়ার্ড নির্মাণ করলে ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে। এছাড়া বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় কেউ যদি অসহযোগিতা করেন সেক্ষেত্রে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। একে/এমএস
Advertisement