অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ফেনির মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার রায়ের ডেথ রেফারেন্স যাতে তাড়াতাড়ি শুনানি হয় সে ব্যাপারে অবশ্যই আমি প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করবো। আমাদের কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার থাকলে আমরা নেব। আসামিদের আপিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নুসরাতের মামলার ব্যাপারে যে দণ্ড দেয়া হয়েছে, তার রেকর্ডগুলো অলরেডি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। এটা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে ট্রিট হবে। এটা এখন পেপারবুক হবে।
Advertisement
মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলাসহ চার আসামির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করেছেন তাদের আইনজীবী। এর আগে হাইকোর্টের জেল আপিল করেছিল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সকল আসামিই।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে পৌঁছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। এছাড়া আইন অনুসারে আসামিরা আপিলও করতে পারেন।
Advertisement
মামলার সব নথি পরীক্ষার পর পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করতে হয়। এরপর ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। তবে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়।
গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে (১৬ আসামি) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন নুসরাতের মা শিরিন আখতার। ওইদিনই অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার অনুগত কিছু ক্যাডার জনমত গঠন করে সিরাজকে জেল থেকে বের করে আনার জন্য। ৩ এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে জেলখানায় পরামর্শ করে এসে ৪ এপ্রিল মাদরাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে খুন করার পরিকল্পনা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ এপ্রিল নুসরাত মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে খুনিরা পরিকল্পিতভাবে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়।
ঘটনাস্থল থেকে নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর তাকে স্থানান্তর করা হয় ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে নুসরাতকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
Advertisement
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন। এদিকে ১০ এপ্রিল মারা যান নুসরাত। এই মামলায় ২৮ মে অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০ জুন অভিযোগ গঠন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করেন। মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক গ্রহণ করা হয়।
এফএইচ/এনএফ/এমএস